পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তিতে ব্যয় কমলো ২৪ কোটি টাকা
১৫ জুলাই ২০২২ ০৯:১৪
ঢাকা: পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তিতে পরামর্শক ব্যয় কমলো ২৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কেননা এ খাতে মোট প্রস্তাব করা হয়েছিল ৬৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ভেটো দেওয়া হয়। আলোচার পর ৪০ কোটি টাকা পরামর্শক ব্যয় ধরে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ‘গল্পামারী-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের ২৮ কিলোমিটার চুনকুড়ি নদীর ওপর চুনকুড়ি সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এই ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৭০ কোটি টাকা এবং আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টসহ (এডিএফডি) অন্যান্য সংস্থার বৈদেশিক ঋণ থেকে ৫৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রকল্প প্রস্তাটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। ওই সভায় পরামর্শক ব্যয় বাবদ ৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ৮২ হাজার টাাকা ধরা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়। এই ব্যয় কমিয়ে ৪০ কোটি টাকার মধ্যে রাখার সুপারিশ দেয় পিইসি। সেটি মেনে পরামর্শক বাবদ ব্যয় ৪০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটিজ খাতের আওতাধীন বিভিন্ন উপ-অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে বলা হয়। জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটিজ খাত হতে জনবল নিয়োগসহ জীপ, পিক-আপ ও মোটর সাইকেল ক্রয়ের সংস্থান বাদ দিয়ে প্রয়োজনে পৃথকভাবে উল্লেখ করতেও সুপারিশ দেওয়া হয় পিইসি সভায়। এসব সুপারিশ মেনে ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এডিএফডি) এই প্রকল্পে ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার দেওয়ার নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ৬৯ দশমিক ৬৫ হতে ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশিষ্ট ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন গ্যাপ পূরণের জন্য ইআরডি উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গল্পামারী-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কটি খুলনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। সড়কটি ব্যবহার করে দাকোপ উপজেলার জনগণ খুলনা জেলা সদরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় যাতায়াত করে থাকে। সড়কটির ২৮ কিলোমিটারে চুনকুড়ি নদীটি বিদ্যমান থাকায় দাকোপ উপজেলার জনগণ সরাসরি ও স্বল্প সময়ে খুলনা জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারে না। বর্তমানে এই স্থানে ফেরির মাধ্যমে যোগাযোগ চলমান আছে। এজন্য আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এডিএফডি) ঋণ সহায়তায় চুনকুড়ি নদীর ওপর ১ হাজার ২৩৪ দশমিক ৩৮ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মোট ৭৯৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এই প্রকল্পটির ওপর গত বছরের ১০ নভেম্বর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্তে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৪৫ কোটি ৩২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা এবং বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০২২ সালের জুন হতে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। পিইসি সভায় ডিপিপির তুলনায় পুনর্গঠিত ডিপিপির ব্যয় ৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে সাধারণ শর্ত অনুযায়ী কিছু পরামর্শক থাকে। এছাড়া এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গেলে পরামর্শক প্রয়োজন হবে। তবে যতটা কম রাখা যায় আমরা সে চেষ্টাটাই করেছি।’
পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক সময় আমরা দুর্বল ছিলাম। তখন বিদেশিরা আমাদের বলত- তোমাদের দক্ষতার অভাব আছে, আমরা লোক দিচ্ছি। অথবা তোমরা লোক দাও আমরা দেখছি। কিন্তু এখন আমরা অনেক দক্ষ হয়েছি। কিন্তু ওই অভ্যাসটা এখনো আছে। তাই ঢালাওভাবে পরামর্শক নেওয়াটা বন্ধ করতে হবে। এখন আমরা অনেক সতর্ক। পর্যায়ক্রমে এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। তবে এখনো বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান নিতে গেলে তাদের কিছু শর্ত মানতেই হয়।’
সারাবাংলা/জেজে/এনএস