Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোববার পদ্মা সেতু বুঝে পাচ্ছে রেলওয়ে, লাইন বসছে এ মাসের শেষে

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুলাই ২০২২ ১৫:৪৪

ঢাকা: জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ২৫ জুন উদ্বোধন করা হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পরিকল্পনা থাকলেও সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় পদ্মা সেতুতে একসঙ্গে গাড়ি ও রেল চালু করা সম্ভব হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে— দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেললাইনের কাজ শুরু করতে চাচ্ছে তারা। এ জন্য সেতু বিভাগের সঙ্গে বৈঠকও করেছে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

শনিবার (১৬ জুলাই) অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রোববার (১৭ জুলাই) সেতু হস্তান্তরের কাজ শুরু করবে সেতু বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে চলতি জুলাই মাসের শেষ দিকে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে।

এর আগে শুক্রবার (১৫ জুলাই) পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প পরিদর্শন করে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত নতুন লাইনে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।

সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রকল্প শেষ করে গত ২৫ জুন যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ টেকসই হলো।

পরিকল্পনা অনুযায়ী— ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল বিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রতীক্ষিত পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে চলবে সড়ক যানবাহন আর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল লাইন স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে। এ রেলপথ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলায় প্রথম রেলসংযোগ স্থাপন করবে।

বিজ্ঞাপন

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে— পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সঙ্গে ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ ও পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত মোট ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি তিনভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙা এবং ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল চলতি বছরের জুনের মধ্যে পদ্মাসেতুর সড়ক পথের সঙ্গে সঙ্গে রেলপথে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অংশ আগে চালু করা হবে। কিন্তু পদ্মাসেতুর ওপর রেলপথ তৈরির নির্দিষ্ট অংশে গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় সড়কের সঙ্গে রেললাইনের কাজ শেষ করা যায়নি। যে কারণে সেতুতে সড়ক ও রেলপথ একসঙ্গে চালু করা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার (১৭ জুলাই) সেতু বুঝিয়ে দেবে সেতু বিভাগ। এরপরই শুরু করে লাইন বসানোর কাজ।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেতু বুঝিয়ে দিতে তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। এরপর আমরা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখব যে, সেতুর ওপর দিয়ে যে গাড়ি চলাচলে কোনো ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয় কীনা। আর তাতে রেললাইন স্থাপনের কাজে অসুবিধা হয় কি না। এ সব বিষয় দেখার পরেই লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। তাতে চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লাইন স্থাপনে ছয় মাসের মতো সময় লেগে যাবে। সে হিসাবে আমরা আগামী বছরের জানুয়ারিতে পুরো লাইন বসানোর কাজ শেষ করতে পারব।’

এর আগে, গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) পদ্মা রেল সংযোগ সেতু পরিদর্শনে যান রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, পরের সপ্তাহ থেকে পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করা হবে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত নতুন লাইনে ট্রেন চলাচল চালু করা যাবে। সে লক্ষ্যে দ্রুত কাজ এগিয়ে চলছে।

সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে থাকা এই প্রকল্পটি মোট তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা থেকে মাওয়া, দ্বিতীয় অংশ মাওয়া থেকে ভাঙ্গা আর তৃতীয় অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত।

পরিকল্পনা অনুযায়ী— মাওয়া থেকে ভাঙা অংশ শুরু হবে আগে, ঢাকা থেকে মাওয়া পরে এরপরে ভাঙ্গা থেকে যশোর। কাজের অগ্রগতি মাওয়া থেকে ভাঙ্গা ৮০ শতাংশ, ঢাকা থেকে মাওয়ার অগ্রগতি ৬০ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

এর মধ্যে জানুয়ারিতে কাজ শেষ হবে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত, ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে ঢাকা থেকে মাওয়া অংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন নির্মিত হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুর রাজবাড়ী হয়ে খুলনা, যশোর, দর্শনা, বেনাপোল পর্যন্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন লাইন যেটি আসছে জানুয়ারির মধ্যে চালু হয়ে যাবে। তখন মোংলা পর্যন্ত রেল চলাচল সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/জেআর/একে

পদ্মা নদী পদ্মা সেতু পদ্মা সেতুতে রেললাইন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর