‘এক-এগারোর সময় অনেক বড় নেতা ভয়ে প্রোগ্রামে যেতেন না’
১৬ জুলাই ২০২২ ১৮:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘এক-এগারোর সময় আমাদের দলের অনেক বড় নেতা বেসুরে কথা বলেছেন। যারা বেসুরে কথা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন, তারা অনেকে ভয়ে দলীয় কর্মসূচিতেও যেতেন না, কেউ কেউ গেলেও অপদস্থ হয়েছিলেন।’
শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ‘শেখ হাসিনার কারাবরণ’ দিবস উপলক্ষে দলটির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর এদিন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছিল।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নেত্রী গ্রেফতার হবেন, আমরা বুঝতে পারছিলাম। নেত্রীও জানতেন, তিনি প্রস্তুত ছিলেন। আমি নিজেও ঘরে থাকতাম না, রাতে জায়গা বদল করে করে থাকতাম। নেত্রীকে গ্রেফতারের সময় সুধা সদনে সবকিছু তছনছ করা হয়েছিল। ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল। গ্রেফতারের পর নেত্রী মতিয়া চৌধুরীর মাধ্যমে দলের সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ওপর। তিনি দায়িত্ব পাবার পর নেত্রীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে গুলশানে তাঁর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন।’
‘সেদিন জিল্লুর চাচার সঙ্গে আমার প্রথম বাক্য বিনিময় ছিল- নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এখন দলটা ভাঙার চেষ্ঠা করা হবে। দল যদি তারা ভাঙতে পারে তাহলে নেত্রীকে মুক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। নেত্রীর অবর্তমানে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নেতা জিল্লুর রহমান অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। নেত্রী যখন কারাগারে তখন জিল্লুর রহমান ছিলেন আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তার সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয়। দল ঐক্যবদ্ধ ছিল বিধায় কর্মীদের মনে আশা ছিল। কর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ ছিল। সারাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে।’
শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতি, অনাচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হয়েছিল, যারা দুর্নীতিতে পরপর পাঁচবার দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল, যারা হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করেছে, যারা দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য বানিয়েছিল সেই বিএনপি জামাতের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান গ্রহণ করবে। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, যে স্লোগান দিয়ে ও বক্তব্য রেখে তারা সরকার গঠন করেছিল, সেই অন্যায়-অবিচারের মধ্যে তারাই আবার যুক্ত হয়ে গেল।’
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একমাত্র শেখ হাসিনা কথা বলেছিলেন। বিএনপি ও তাদের নেতারা প্রতিবাদ করেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে গ্রেফতারের কয়েকদিন পর বেগম খালেদা জিয়ার পার্সোনাল উইংয়ের একজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে বলল, আমাদের ম্যাডামকেও তো গ্রেফতার করা হতে পারে, আমরা একসঙ্গে কিছু করতে পারলে ভালো হয়। তখন আমি জবাব দিয়েছিলাম- আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে আন্দোলন হবে। আমরা বিএনপির অনাচার-অবিচার অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম। সুতরাং আরেকটি অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবার যারা অপরাধ করেছিল তাদের সাথে আমরা আন্দোলন করতে পারি না।’
এক-এগারোর মতো দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার মানসিকতা থাকতে হবে। ২০০৮ সালে দল ঐক্যবদ্ধ ছিল বিধায় নেত্রীকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম। আগামী নির্বাচনেও যদি দল ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে ইনশাল্লাহ ২০০৮ সালের মত ধস্ নামানো বিজয় আসবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
সারাবাংলা/আরডি/একে