সারাদেশে সড়কে ঝরল ২৫ প্রাণ
১৬ জুলাই ২০২২ ১৯:২১
ঢাকা: ইদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য গ্রাম থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। কিন্তু এই ফেরাটা নির্বিঘ্ন হচ্ছে না মোটেও। যানজটের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। ইদের পরে সড়কে গাড়ির চাপ বাড়ায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে। শনিবার (১৬ জুলাই) সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় সাতজন, বগুড়ায় চারজন, সিরাজগঞ্জে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দু’জন, গাজীপুরে দু’জন, নীলফামারীতে একজন, হবিগঞ্জে তিনজন এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিনজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আরও অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পটুয়াখালীতে অপর এক দুর্ঘটনায় ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
টাঙ্গাইল থেকে পাঠানো তথ্যে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও নয়জন। শনিবার ভোররাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুল্যা মনসুর নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ঢাকাগামী বালুভর্তি একটি ট্রাক দুল্যা মনসুর নামক এলাকায় মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ করেই যাত্রীবাহী বিনিময় পরিবহনের একটি বাস ওই ট্রাকে পেছন থেকে এসে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের যাত্রীরা হতাহতের শিকার হন।
গোড়াই হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা টুটুল জানান, দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। তবে তাদের কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ঢাকার দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর মির্জাপুর থানা পুলিশ রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নিলে সকাল পৌনে ৭টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে, এদিন মির্জাপুরে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বাসচাপায় এক নারী ও তার দুই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামুর্কি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- মির্জাপুর উপজেলার বাশতৈল এলাকার মো. মাসুদের স্ত্রী পারভিন আক্তার (২৮) এবং তার দুই শিশু সন্তান সুমন (৮) ও সাদিয়া (৬)। এ ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, ‘হেঁটে সড়ক পার হওয়ার সময় একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে একজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর দু’জনের মৃত্যু হয়।’
আরও পড়ুন:
- হবিগঞ্জে বাসচাপায় সিএনজির ৩ যাত্রী নিহত
- ময়মনসিংহে ট্রাক চাপায় বাবা-মা-মেয়ের মৃত্যু
- বগুড়ায় ট্রাক ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে নিহত ৪
- সিরাজগঞ্জে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪
- ঝিনাইদহে ট্রাকের ধাক্কায় কৃষক নিহত, আহত ৪
- টাঙ্গাইলে সড়কের পাশে দাঁড়ানো ট্রাকে বাসের ধাক্কা, নিহত ৪
- ট্রাকচাপায় বাচ্চা প্রসব, প্রসূতির প্রাণ গেলেও বেঁচে গেল নবজাতক
- মির্জাপুরে সড়ক পারাপারের সময় বাসচাপায় ছেলে-মেয়েসহ মা নিহত
বগুড়া থেকে পাঠানো তথ্যে জানা যায়, বগুড়ার কাহালু উপজেলায় প্রাইভেটকার ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন। হতাহতরা সবাই প্রাইভেটকারের যাত্রী।
কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন জানান, সকালে নওগাঁ থেকে একটি যাত্রীবাহী প্রাইভেটকার বগুড়ার দিকে যাচ্ছিল। পথে নওগাঁগামী একটি পিকআপের সঙ্গে প্রাইভেটকারটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের তিন যাত্রী নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও দুজন। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আরও একজন মারা যান।
এদিকে, আমাদের সিরাজগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানান, তাড়াশ উপজেলায় বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুপুর পৌনে ২টার দিকে হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কের খালকুলা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তাত্ক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আরপি পরিবহনের একটি বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি ভুল লেনে গিয়ে দাঁড়ানো একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এরপর বাস ও ট্রাক দুটি একত্রে গিয়ে আরেকটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এই সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার উজানিসার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা অটোরিকশাচালক চাঁন মিয়া (৫০) এবং অটোরিকশার যাত্রী বিল্লাল হোসেন (৪৫)। তিনি কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, সকালে কুমিল্লা অভিমুখী একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দু’জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অটোরিকশার অন্য চার যাত্রী।
গাজীপুর থেকে জানা যায়, গাজীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। ভোরে মহানগরের পূবাইলের বসুগাঁওয়ে ট্রাক-লেগুনা সংঘর্ষে একজন এবং একই এলাকার সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
পূবাইল থানা পুলিশের এসআই আবুল কাশেম জানান, পূবাইলের বসুগাঁও-এ ভোর চারটার দিকে টঙ্গীগামী ট্রাকের সঙ্গে উল্টোপথে আসা নরসিংদীগামী লেগুনার সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনার ১২ যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে মনিরুজ্জামান (৩৮) নামে একযাত্রী মারা যান। অন্য আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া সকাল সাড়ে আটটায় পূবাইলের সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম হোসেন (৩৪) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। ইব্রাহিম নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার ইদ্রিস আলীর ছেলে।
পুবাইল থানা পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় অটোরিকশা দিয়ে জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী যাচ্ছিলেন ইব্রাহিম। এ সময় তাকে বহনকারী অটোরিকশাটি সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুই অটোচালক আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নীলফামারী থেকে পাঠানো তথ্যে জানা যায়, জেলার জলঢাকা উপজেলার টেংগনমারী-মীরগঞ্জ সড়কের বটতলা শান্তিনগর বাজারে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের চাপায় এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ভ্যানচালকের নাম আজিজুল হক (৪৫)। তিনি জলঢাকা উপজেলার আরাজি কাঠালি বালাপাড়া এলাকার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে।
দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জলঢাকা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করেছি। ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ময়মনসিংহ থেকে পাঠানো তথ্যে জানা যায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের কোর্টবিল্ডিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম (৪২), তার স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) ও মেয়ে সানজিদা (৬)।
ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত রত্না বেগম সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মেয়ে সানজিদাসহ রত্নাকে নিয়ে তার স্বামী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্ত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে এসেছিলেন। এ সময় রাস্তা পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী, স্ত্রী ও মেয়ে মারা যান। ট্রাক চাপায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেট থেকে সাত মাসের সন্তান বেরিয়ে যায়। বর্তমানে ওই সন্তান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রযেছে। এ ঘটনায় ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হলেও চালক পালিয়ে গেছেন বলেও জানান ওসি মাইন উদ্দিন।
এদিকে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসচাপায় সিএনজির তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের মৃত আবুল মিয়ার স্ত্রী বকুল বেগম (৫০), আবুল মিয়ার ভাতিজা জাবেদুর রহমান (৩৮) ও একই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের রব্বান মিয়া (৪৮)।
শেরপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পরিমল চন্দ্র দেব জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে সিলেটগামী মিতালী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় অটোরিকশার যাত্রী বকুল বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অটোরিকশা চালক রব্বান মিয়াকে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আহত যাত্রী বেতাপুর গ্রামের জাবেদুর রহমানকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া পটুয়াখালী থেকে পাঠানো তথ্যে জানা যায়, পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের মৌকরণ এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার ভোরের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুমকি থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, ঈগল পরিবহনের একটি বাস ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে কুয়াকাটা যাচ্ছিল। পথে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের মৌকরণ ব্রিজের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসে থাকা যাত্রীদের বেশিরভাগ আহত হয়েছেন।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম