Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেলের ‘সিন্ডিকেট’র বিরুদ্ধে রনির একার যুদ্ধ

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৬

ঢাকা: ‘গোল হয়ে আসুন সকলে, ঘন হয়ে আসুন সকলে’— একটি ছোট হোয়াইট বোর্ড হাতে চিৎকার করে সৈয়দ শামসুল হকের এই কবিতাংশটুকু বলে যাচ্ছেন মহিউদ্দিন রনি। বোর্ডে লেখা— ‘দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট’। রনির হাতে আছে একটি শেকল। শেকলের অপর প্রান্ত বেঁধে রেখেছে অন্য এক শিক্ষার্থীর গলা। যার হাতেও আছে একটি হোয়াইট বোর্ড, যাতে লেখা— ‘বাংলাদেশ’।

কমলাপুর রেলস্টেশনে গত ১১ দিন ধরে অবস্থান করা রনির বার্তা খুব পরিষ্কার— দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট চালাচ্ছে ‘সোনার বাংলাদেশ’। রনি এই সিন্ডিকেট ভাঙতে চান। আপাতত রেলের। তাই রনি সবাইকে গোল হয়ে আসতে বলছেন, ঘন হয়ে আসতে বলছেন। এবং ‘বেড়ি পরানো এই বাংলাদেশ’কে বাঁচাতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন টানা ১০দিন ধরে।

বিজ্ঞাপন

গত ৭ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্ম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি অবস্থান করছেন রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ইদের দিনও ছিলেন সেখানে। রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ায় ইদুল আজহার আগে ৭ জুলাই থেকে টিকিট কাউন্টারের সামনে মহিউদ্দিন অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। রেলওয়ের নানান অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি টানা প্রতীকী উপায়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

ঘটনার সূত্রপাত

রনি জানান, গত ১৩ জুন রাজশাহী ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা-রাজশাহীর টিকিট কাটার চেষ্টা করেন তিনি। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে বিকাশ থেকে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠানো হয়। কিন্তু পিন নম্বর দিয়ে সেটা নিশ্চিত করার আগেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিটের মূল্য কাটা হয়। ঘটনার পর তিনি দ্রুত কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের সার্ভার রুমে অভিযোগ করেন। সেখান থেকে কারণ হিসেবে বলা হয়, সিস্টেমের কারণে এমন হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে তাকে অভিযোগ করতে বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অথচ তখন আমার চোখের সামনেই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার আসনটি আরেক যাত্রীর কাছে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেন স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর। এরপর ১৪ এবং ১৫ জুন ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে দু’বার অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত শুনানির ডাক আসেনি।’

রনির ছয় দফা দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি তার অবস্থান কর্মসূচির শুরু থেকেই ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবিগুলো হলো—

১. টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

৩. অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

টানা আন্দোলনের পর মহিউদ্দিন রনি এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার ছয় দফা দাবিগুলো লিখিত আকারে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ রেলের বিভিন্ন দফতরে পেশ করবেন তিনি। মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘আমি আমার দাবিগুলো লিখিত আকারে বিভিন্ন দফতর এবং রেলমন্ত্রীর কাছে পেশ করব। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর যদি কোনো সাড়া না মেলে, তাহলে আমি আলটিমেটামে চলে যাব।’

রনি আন্দোলন চালাচ্ছেন যেভাবে

রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে টানা ১১ দিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন মহিউদ্দিন রনি। চলমান আন্দোলনে অর্থের যোগান দেওয়ার জন্য নিজের ক্যামেরা বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে রনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ৬ দফা দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসা শিক্ষার্থীদের খাবার, অবস্থানের আনুষঙ্গিক খরচ এবং সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পরিচালনা করার জন্য অর্থের হিমশিম খাচ্ছিলাম। তবে সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে, সেই সমস্যার সমাধানও মোটামুটি করা শুরু করেছি।’

আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে অনেকেই টাকা পাঠাতে চাইলেও আন্দোলন ‘বিতর্কিত’ হওয়াত সম্ভাবনা এড়াতে রনি তা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, ‘অনেকেই টাকা পাঠাতে চেয়েছেন। তাদের প্রতি আমি আমৃত্যু কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি আমার আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছি না। তাই আপনাদের টাকা পাঠাতে নিরুৎসাহিত করেছি। যদি একেবারেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমি সবাইকে জানাব। আশা রাখি, তখনও আপনারাই সবার আগে এগিয়ে আসবেন।’

শুধু ক্যামেরা বিক্রি করেই থেমে নেই রনি। নিজের শখের উকুলেলে, কাহন, গিটার ও ডেক্সটপও বিক্রয় করতে চান তিনি। শখের এসব জিনিস বিক্রি করে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান এই আন্দোলনকারী যুবক। মহিউদ্দিন রনি বলেন ‘শিক্ষার্থী বন্ধুরা নিশ্চিন্তে আসুন। অর্থের কারণে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন থেমে থাকবে না। জয় আমাদের সুনিশ্চিত। আলো আসবেই ইনশাআল্লাহ।’

এদিকে, রনির এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশন। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল সংহতি জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, রেলওয়ের যাত্রী হয়রানি, টিকিট কালোবাজারি, খাবারের দাম নির্ধারণে অন্যায্যতা, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ রেলওয়ের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা দিন দিন বাড়ছে। এসব নিয়ে তেমন কোনো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ না হলেও যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

টপ নিউজ দুর্নীতিবাজ মহিউদ্দিন রনি রেলওয়ে সিন্ডিকেট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর