Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএসএমএমইউতে ৬০ জনকে দিয়ে শুরু হবে বঙ্গভ্যাক্সের ট্রায়াল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুলাই ২০২২ ২২:০৫

ঢাকা: মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স। প্রথম ধাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৬০ জনের শরীরে প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন। আর এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে গবেষক দলের প্রধান হিসেবে থাকছেন অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

রোববার (১৭ জুলাই) ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়। অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন জানান, গ্লোব বায়োটেকের আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, মানবদেহে প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ছাড়পত্র পেয়েছে দেশীয় কোম্পানি গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন। ৬০ জনকে নিয়ে বিএসএমএমইউয়ে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে।

আরও পড়ুন- ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পেল বঙ্গভ্যাক্স

তিনি আরও বলেন, এই ভ্যাকসিনটি প্রাকৃতিক বিশুদ্ধ এমআরএনএ (মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) দিয়ে তৈরি। তাই এটি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও কার্যকর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বঙ্গভ্যাক্স ভ্যাকসিন এক ডোজের। এটি অনুমোদন পেলে বিদেশেও চাহিদা তৈরি হবে।

গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে এক বার্তায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) নির্দেশনা অনুযায়ী বানরের দেহে চালানো বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার ফলাফলের প্রতিবেদন গত বছরের ১ নভেম্বর জমা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিএমআরসি’র তৃতীয় ও সবশেষ চিঠির সব প্রশ্নের জবাবও দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে বিএমআরসি’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পূর্বশর্তসহ সব পর্যবেক্ষণের যথাযথ উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়াও শেষ হয়।

গ্লোব বায়োটেক বলছে, এরপর গত ২১ নভেম্বর বিএমআরসি’র ন্যাশনাল রিসার্চ এথিক্স কমিটির সভায় মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার নৈতিক অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যা অনুমোদন পায় ২৩ নভেম্বর। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এরপর ২৫ নভেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে আবেদন করে গ্লোব বায়োটেক। দীর্ঘ পর্যালোচনার পর গত ৭ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (রোববার) বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত অনুমতি পেয়েছে।

গ্লোব বায়োটেক তাদের বার্তায় দাবি করেছে, ডেল্টা ও ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের সব ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে বঙ্গভ্যাক্সের সিকোয়েন্স মিলিয়ে প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই বঙ্গভ্যাক্স কার্যকর বলে প্রমাণ মিলেছে। ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে বানরের দেহে পরিচালিত পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকর হিসেবেও প্রমাণিত হয়েছে এই ভ্যাকসিন। প্রাথমিক ফলাফলে ভ্যাকসিনটি বানরের শরীরে নিরাপদ ও কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে বানরের দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি সাত দিনের মধ্যেই করোনাভাইরাসকে নিউট্রালাইজ করতে পেরেছে বলেও দাবি করেছে গ্লোব বায়োটেক।

এসব ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, উন্নত বিশ্ব করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যে নতুন ভ্যাকসিনের কথা বলা হচ্ছে, বঙ্গভ্যাক্স হতে পারে সেই ভ্যাকসিন। ফলে এটি বিশ্বকে করোনা সংকট থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। এটি এক ডোজের ভ্যাকসিন হলেও অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর এটি বুস্টার ডোজ হিসেবে প্রয়োগ করা যাবে বলে গ্লোব বায়োটেক আশা করছে।

গ্লোব বায়োটেক আরও বলছে, তাদের এমআরএনএ-ভিত্তিক বঙ্গভ্যাক্স ভ্যাকসিনটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স এনসিবিআই ডাটাবেজে জমা দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত গবেষণার আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে এলসেভিইয়ারের ভ্যাকসিন জার্নালে। বঙ্গভ্যাক্স উৎপাদনের মৌলিক প্রযুক্তি ন্যাচার জার্নালের সায়েন্টিফিক রিপোর্টসেও প্রকাশিত হয়েছে।

বঙ্গভ্যাক্সের অন্যান্য তথ্য দিয়ে গ্লোব বায়োটেক জানিয়েছে, ৪-ডিগ্রি তাপমাত্রায় এক মাস এবং মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে ভ্যাকসিনটি। এটি সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাসমুক্ত এবং শতভাগ হালাল।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল গ্লোব বায়োটেক টপ নিউজ বঙ্গভ্যাক্স


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর