‘উন্নয়ন ট্যাবলেট দিয়ে আর ভোলানো যাবে না’
১৮ জুলাই ২০২২ ১৬:৫৯
ঢাকা: উন্নয়ন ট্যাবলেট দিয়ে দেশের জনগনকে আর ভোলানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রমনা থানার ১৯ নং ওয়ার্ড এবং শাহবাগ থানার ২১ নং ওয়ার্ডের সম্মেলন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং করবেন আর উন্নয়নের কথা বলবেন। উন্নয়নের ট্যাবলেট বেশি দিন খাওয়ানো যাবে না। উন্নয়নের ট্যাবলেট খাইতে খাইতে এখন শ্রীলংকা বমি কইরা দিছে। শ্রীলংকা কিন্তু এখন উন্নয়নের ট্যাবলেট খায় না। সেখানে খালি উন্নয়ন বলতে বলতে সব শেষ করে দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভাইগা গেছে সিঙ্গাপুরে। আপনাদের যাওয়ার জায়গা আছে অবশ্য। ঠিকানা বলতে হবে না। আপনার ঠিকানা আগেই করা আছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ঘোষণা দিয়েছে আগামীকাল থেকে লোডশেডিং শুরু হচ্ছে। ওইদিন বললেন যে, জনগণের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। কুইক রেন্টাল দিয়ে আপনারা বিদ্যুৎ দিয়েছেন, বিদ্যুতের আর অভাব নেই। এখন আবার বলছেন উল্টোকথা- লোডশেডিং করতে হবে। তাহলে এত টাকা দিয়ে কুইক রেন্টাল কেন করলেন?’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক তারা কিন্তু বসে বসে টাকাটা পাবেন, বিদ্যুৎ থাকুক বা না থাকুক, বসে বসেই টাকা পাবে তারা। এখন আমাদের প্রশ্ন তাহলে এত টাকা নিয়ে কুইক রেন্টাল পাওয়া প্ল্যান্ট কেন করা হলো? এত টাকা নিয়ে পরিবেশ নষ্ট করে কেন সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে?’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের নামে এত চুরি করার পরও যদি লোডশেডিং হয় আমার তো মনে হয় এই লোডশেডিংই সরকারের ক্ষমতা ত্যাগের কারণ হতে পারে। এভাবে মানুষ কিন্তু অসহিষ্ণু হচ্ছে, সাধারণ মানুষ অসহিষ্ণু হচ্ছে।’
সিইসির বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় দেখলাম একটি খবর- ‘তলোয়ার নিয়ে আসলে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে’। এই যে নির্বোধ ব্যক্তি (কাজী হাবিবুল আউয়াল), আগে তো ছিল ছাগল নুরুল হুদা (কে এম নুরুল হুদা), এটা একটা পাঠা, এনার (কাজী হাবিবুল আউয়াল) কোনো বুদ্ধিসুদ্ধি নেই।’
তিনি বলেন, ‘তলোয়ার-রাইফেল! আরে ভাই, তলোয়ার তো অনেক আগে চলে, সেই অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরে তো আর তলোয়ার আসেনি। আপনি তলোয়ার কোত্থেকে আবিষ্কার করলেন? তলোয়ার আনবে কে? রাইফেল হাতে নেবে কে? এটি উনাকে ঠিক করতে হবে। উনি কী রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারবেন? সেটিও তো পারবেন না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- এরকম এই নির্বাচন কমিশন, এই ফালতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যদি বিদেশ থেকে তৈরি করা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আসা হয় তবুও এই সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হবে না। যেখানে পুলিশ প্রশাসনসহ প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হয়েছে, সেখানে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। সংসদ ভাঙতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে গঠন করতে হবে। তারপরে নির্বাচন হবে।’
ডলার সংকট প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই আজকে বাংলাদেশে ডলারের ক্রাইসিস। আজকে বলা হচ্ছে যদি এখন বিদেশ থেকে কোনো কিছু আমদানি করতে হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। আমি ব্যবসা করব, এটি আমার লিবার্টি। আমি এলসি খুলব, আমার ডলার যাবে, মালামাল আসবে। আমার দেশে ডলার নাই। কেন নাই? কারণে, ট্রাংক ভর্তি করে এয়ারপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের বহু ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সেইদিন পত্রিকায় আসলো যে, সুইস ব্যাংকে ৩/৪ হাজার কোটি ডলার রেগুলার জমা হচ্ছে। আমার দেশের ডলার যদি সুই ব্যাংকে চলে যায় এদেশের মানুষ বাঁচবে কীভাবে।’
আন্দোলনের সময় আসছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজকের প্রধানমন্ত্রী জাতিকে বিভক্ত করে দেশের উন্নয়ন করছেন। এমন উন্নয়ন করছেন যে আমরা আজকে ছোট্ট একটা জায়গায় মিটিং করছি। আমাদেরকে বাইরে মিটিং করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আজকে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানের সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই, আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোত ঘর থেকে মিছিল নিয়ে রাস্তায় যাব। কোনো একটা চৌরাস্তায় গিয়ে আমরা মিলিত হবো।’
‘এই মিছিল রমনা থেকে বের হবে, শাবাগ থেকে বেরুবে, শাহজাহানপুর থেকে বের হবে, ফরিকরাপুল থেকে বের হবে, মতিঝিল থেকে বের হবে। সব একসঙ্গে আমরা ওই বঙ্গভবন কিংবা সরকারের সচিবালয়ে ঘেরাও করব- মনে রাইখেন। সময় আসতেছে, গুলি করবে? অনেক গুলি কিনেছেন বিদেশ থেকে’- বলেন মির্জা আব্বাস
তিনি বলেন, ‘এই যে একটা বিমান ক্র্যাশ হলো, আমি খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি অস্ত্রসহ একটা প্লেন ক্র্যাশ হলো। এই অস্ত্র কার জন্য ওরা আনতে গিয়েছিল? এ বিষয়ে একটা পরিষ্কার ব্যাখ্যা আমরা চাই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও এম এ হান্নানের পরিচালনায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা ও মোশাররফ হোসেন খোকন বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এজেড/একে