মুজিববর্ষে অঙ্গীকার: জমি ও ঘর পাচ্ছে ২৬ হাজার ২২৯ পরিবার
১৮ জুলাই ২০২২ ১৭:৫৯
ঢাকা: মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তৃতীয় দফায় ভূমিহীন ও গৃহহীন আরও ২৬ হাজার ২২৯ পরিবারকে ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২১ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে যুক্ত হয়ে এই ঘরগুলো হস্তান্তর করবেন তিনি।
সোমবার (১৮ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এ দিন হস্তান্তরের মাধ্যমে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ দেশের ৫২টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আগামী ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে ঘোষণা করতে যাচ্ছি, পঞ্চগড় ও মাগুরায় আর কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন নেই। এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল অর্জন। গত মাসে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে আমাদের মনোবল আকাশচুম্বী হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে মানবতার ছোঁয়া পৌঁছে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শতভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে বাংলাদেশের দুটি প্রত্যন্ত জেলা। সুতরাং উন্নয়নের ছোঁয়া এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হবেন ৫টি প্রকল্প এলাকার সঙ্গে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে— লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাহান পাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার জঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি জমির মালিকানাসহ ৬৩ হাজার ৯৯৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জুন জমির মালিকানাসহ ৫৩ হাজার ৩৩০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট একক ঘর সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। চলমান তৃতীয় পর্যায়ে মোট বরাদ্দকৃত একক ঘরের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮০০টি, যার মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল হস্তান্তরিত হয় ৩২ হাজার ৯০৪টি এবং আগামী ২১ জুলাই হস্তান্তর হবে ২৬ হাজার ২২৯টি। এ ছাড়া আরও নির্মাণাধীন রয়েছে ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত বিশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ২ শতক জমিসহ সেমিপাকা একক গৃহ প্রদান করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে জমির মালিকানাসহ হস্তান্তরিত গৃহের সংখ্যা ৬০ হাজার ১১১টি। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জুন ২০২১ তারিখে জমির মালিকানাসহ হস্তান্তরিত গৃহের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৩০০টি। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট একক গৃহের সংখ্যা ১১৭৩২৯ টি। চলমান তৃতীয় পর্যায়ে (২০২১-২২) মোট বরাদ্দকৃত একক গৃহের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮০০ টি, যার মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল ২০২২ তারিখে হস্তান্তরিত ৩২ হাজার ৯০৪টি, ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে হস্তান্তর হচ্ছে ২৮ হাজার ২২৯টি এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ৮ হাজার ৬৬৭টি।
১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত বরাদ্দকৃত মোট একক গৃহের সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত একক ঘরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তৃতীয় পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দকৃত বিশেষ ডিজাইনের গৃহের সংখ্যা ১ হাজার ২৪২টি। একক গৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে সারাদেশে উদ্ধারকৃত খাস জমির তথ্য। সারাদেশে উদ্ধারকৃত খাস জমির হালনাগাদ পরিমাণ: ৫৫১২.০৪ একর সারাদেশে উদ্ধারকৃত খাস জমির আনুমানিক স্থানীয় বাজার মূল্য: ২৯৬৭ কোটি ৯ লক্ষ টাকা। সারাদেশে ক্রয়কৃত জমির হালনাগাদ পরিমাণ: ১৯১.৭৯ একর। জমি ক্রয় বাবদ হালনাগাদ বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ: ১৩৪ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা। ক্রয়কৃত জমিতে পুনর্বাসিত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের হালনাগাদ সংখ্যা: ৮ হাজার ৪৬২টি।
১৯৯৭ সাল হতে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনবার্সন করা হয়েছে ৫,০৯,৩৭০ টি পরিবার (জনসংখ্যা ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৫০ জন, পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে) আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/সংস্থাসহ গৃহ নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ২৬৩টি পরিবার (জনসংখ্যা ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৫ জন, পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে)। ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ৫২টি উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে পুনর্বাসিত পরিবার: ১ হাজার ৯৭৮টি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান প্রমুখ।
সারাবাংলা/এনআর/একে