Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায় রংপুরে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ জুলাই ২০২২ ১৫:৫০

রংপুর: জেলায় স্মরণকালের অসহনীয় গরম আর দাবদাহ হাঁপিয়ে ওঠায় বৃষ্টির জন্য দুই রাকাত নামাজ আদায় করে বিশেষ মোনাজাত করেছেন মুসল্লিরা। এ সময় বৃষ্টির আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রংপুর জেলা সম্মিলিত ইমাম পরিষদের আয়োজনে নগরীর ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ইদগাহ মাঠে এ নামাজ আদায় করা হয়। এতে ইমামতি করেন কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজিদ হোসাইন।

বিজ্ঞাপন

আগামীকাল বুধবার (২০ জুলাই) এবং পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) এ মাঠেই একই সময়ে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হবে। এতে সকলকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জেলার সম্মিলিত ইমাম পরিষদ।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বর্ষা মৌসুমে মৃদু দাবদাহে পুড়ছে রংপুর অঞ্চল। ফলে মানুষের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ছটফট করছে পশুপাখি ও জীবজন্তু। কড়া দাবদাহে ফসলি জমি শুকিয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে আমন ধানের চারা রোপণসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ। এ পরিস্থিতিতে খরা ও অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে সকালে ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। নামাজ শেষে অব্যাহত অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য ও আল্লাহর রহমত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু বলেন, ‘বর্ষাকালে বৃষ্টির দেখা নেই। আষাঢ় শেষে শ্রাবণ শুরু হয়েছে, তবুও স্বস্তির বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে শান্তি ও স্বস্তির বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছি। অসহ্য গরম আর দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বিশেষ এ নামাজ ও দোয়া পরিচালনা শেষে সম্মিলিত ইমাম পরিষদের সভাপতি ও কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজিদ হোসাইন বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আমরা আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চেয়েছি। তার কাছেই আমরা অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি চেয়েছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং তিনিই চাইলে এই অসহনীয় গরম ও দাববাহ থেকে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব। আল্লাহ আমাদের বৃষ্টির মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা আরও দুদিন এই নামাজ আদায় করব।’

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রংপুর বিভাগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক শূন্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের বছর ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০২২ সালের চলতি মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৭ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তিনি জানান, এই সময়টাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে গেল ১৪ দিনে রংপুর বিভাগে রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। মৌসুমের এ সময়টাতে স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি তাপমাত্রা বাড়লেও তা দুই থেকে তিনদিনের বেশি স্থায়ী হওয়ার কথা নয়। তবে এবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে।

আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান আর জানান, টানা ১৪ দিন স্বাভাবিকের থেকে তাপমাত্রা বেশি ছিল ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন উত্তরের কৃষির জন্য অশনি সংকেত।

তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক করে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যুও হয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকেই। এ অবস্থায় গরমে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে গড়ে ২৫ রোগী ভর্তি হচ্ছেন হিট স্ট্রোকসহ তীব্র গরমের কারণে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল মোকাদ্দেম বলেন, ‘হাসপাতালের মেডিসিন, শিশু ওয়ার্ড ও হৃদরোগ বিভাগে গত তিন দিনে নতুন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর সংখ্যা দ্বিগুণ। যারা আসছে, অধিকাংশই সিজনাল রোগী। আমরা প্রত্যেককেই বেটার ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি। অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।’

এদিকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আবু মোঃ জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে রংপুরে প্রচণ্ড গরম অনুভব হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আরও সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে।’

দুপুরের পর কোনো অবস্থাতেই যেন বাইরে তাদের না থাকতে হয় সেভাবেই শিক্ষকদের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অন্যদিকে এ সময় বেশি করে পানি পান, ঠাণ্ডা জাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবেরপানি বেশি করে পান করার পরামর্শ দেন তিনি।

সারাবাংলা/এনএস

দাবদাহ বৃষ্টি কমনায় নামাজ রংপুর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর