অতিবৃষ্টি হলেই মাঠে নামবে সিলেট সিটির ৮ টিম
১৯ জুলাই ২০২২ ২২:৩১
সিলেট: সিলেট নগরে অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বলেছেন, বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন কারণেই সিলেট নগরীতেও অতিবৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে সব দায় নিয়েই তিনি অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ঠেকাতে আটটি স্ট্রাইকিং টিম তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুর ১২টায় সিলেট নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন। এসময় নিজেদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সিলেট সিটি মেয়র বলেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে সিলেটে বৃষ্টিপাত বেড়েছে, তাপমাত্রাও বেড়েছে। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতিতেই অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সিলেটে গত শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এক থেকে দেড় ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বন্যা পরিস্থিতি কারণে বন্যার্তদের সহায়তা, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানি নিষ্কাশনসহ নানা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এরপরই ইদুল আজহা ছিল। পশু কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নগর ভবনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। মাঝের সময়ে ড্রেনেজ সিস্টেম পুরোপুরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পাশাপাশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাতে নাগরিকরাও ড্রেনের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলেছেন।
তিনি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে টিলার মাটি ধসে নালা-নর্দমার পানি প্রবাহ আটকে দিয়েছে। এ কারণেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সবকিছুর পরও আমি দায় মাথায় নিয়ে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই। সামনেও অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ঠেকাতে সিলেট নগরজুড়ে আটটি স্ট্রাইকিং টিম তৈরি করা হয়েছে। এসব টিমের সঙ্গে থাকবেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আমি নিজে এসব টিমের কার্যক্রম মনিটরিং করব।
সংবাদ সম্মেলনের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, গত ১৬ জুলাই রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটি ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত। নগরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি অনেক উঁচু এলাকায়ও পানি জমেছে। তবে সেই পানি আবার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে নেমেও গেছে। এছাড়া সারাদিন রাস্তাঘাটে যে ময়লা জমে, সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় রাত ১২টার পরে। কিন্তু সেই রাতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেসব ময়লা পরিষ্কারের আগেই। এতে রাস্তার ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে চলে গিয়ে পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়।
জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি জরুরিভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে পরদিনই বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সুধী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নগর ভবনের সভাকক্ষে জরুরি মতবিনিময় করা হয় বলে জানান মেয়র। বলেন, জলবায়ু পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণ সামনেও এমন পরিস্থিতির আভাস জানাচ্ছে আবহাওয়া অফিস। এটিকে মাথায় রেখে আমরা কর্মপন্থা অবলম্বন করেছি। দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময় অতিবৃষ্টি হলে স্ট্রাইকিং টিম জলাবদ্ধতা ঠেকাতে মাঠে নামবে।
মেয়র আরিফুল হক নাগরিকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেক নাগরিক ময়লা-আবর্জনা, লেপ-তোষকও ড্রেনের মধ্যে ফেলছেন। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সরকারি নির্দেশনায় তো এমন অপরাধে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা সেটি প্রয়োগ না করে সবার সহযোগিতায় নগরকে সাজাতে চাই।
সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে শত কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও সে অনুপাতে কাজ হয়নি— সমালোচকদের এমন বক্তব্যের জবাব দিয়ে মেয়র আরিফুল বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা শর্তসাপেক্ষে বরাদ্দ পেয়েছি। শর্ত হচ্ছে, বরাদ্দের ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২৪৫ কোটি টাকা আমাদেরই পূরণ করতে হবে। বাকি ৯৮৩ কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে চারটি অর্থবছরে পাবে সিসিক। এর মধ্যে আমরা দুই ধাপে ৩২৯ কোটি টাকা পেয়েছি। এই টাকার কাজ চলমান রয়েছে। বাকিটা পর্যায়ক্রমে পাব। তাই কথায় কথায় হাজার কোটি টাকা জলে গেল— এমনটি বলা কতটা সঠিক হবে, তা আপনারা বিচার করবেন।
মেয়র বলেন, আমরা যেসব কাজ করাচ্ছি সেগুলো আমাদের ইচ্ছাতে নয়। সরকারি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। এগুলো মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে তারপর অনুমোদন হয়। দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে আমার টানা তিন বার সেরা হয়েছি। আমাদের কাজেকর্মে ভুল থাকলে নিশ্চয় সরকারিভাবে আমরা সেরা হতাম না।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী সাম্প্রতিক বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায়, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, প্যানেল মেয়র (১) ও কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপনসহ অন্যান্য কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর
অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা মেয়র আরিফুল ইসলাম সিলেট সিটি করপোরেশন সিলেট সিটি মেয়র