বদলে যাচ্ছে রমনা চাইনিজ রেস্টুরেন্টের নাম
১৯ জুলাই ২০২২ ২৩:২৭
ঢাকা: ঐতিহাসিক রমনা পার্কে অবস্থিত রমনা চাইনিজ রেস্টুরেন্টের নাম বদলে যাচ্ছে। এর নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে ‘রমনা কফি কর্নার’। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, কফি কর্নারটি পরিচালনার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। তবে রমনা চাইনিজ রেস্টুরেন্টটি সবশেষ ২ কোটি ৮৮ হাজার টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হলেও নতুন পরিচয় কফি কর্নারের জন্য কত টাকার দরপত্র আহ্বান করা হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে কফি কর্নারটি বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশঙ্কা করছেন পার্কের সংশ্লিষ্টরা।
রমনা পার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯০৮ সালে নিসর্গ ঢাকা শহরে পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছিল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য লন্ডনের কিউই গার্ডেনের অন্যতম কর্মী মিস্টার আর এল প্রাউডলকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় ঢাকা শহরে পরিকল্পনার অন্যতম অংশ ছিল রমনা পার্ক। এই পার্ক সাজানোর জন্য নেওয়া হয় নানা কার্যক্রম। পার্কের সবুজ প্রান্তরের চারদিকে রাস্তা করে ফুটপাত বরাবর লাগানো হয় কৃষ্ণচূড়া গাছের সারি। পার্কের পূর্ব পাশে নির্মাণ করা হয় বিচারপতি, সচিব থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সরকারি অধিকর্তাদের বাসভবন। পার্কের ভেতরে চারদিকে ওয়াকওয়ে ও শিশুদের বিনোদনের জায়গার পাশাপাশি নির্মাণ করা হয় গলফ কোর্ট।
শুধু তাই নয়, পার্কের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান ক্যানেলকে নতুন করে সাজিয়ে নৌকা ভ্রমণের জন্য তৈরি করা হয় লেক। আর সেই লেকের পাশেই স্থাপন করা হয় একটি রেস্টুরেন্ট, যেটি এতদিন ধরে ‘রমনা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে এসেছে।
রমনা পার্কে যাদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে, রমনা চাইনিজ রেস্টুরেন্টটি তাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম। সুন্দর পরিবেশের পাশাপাশি মানসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য সুনাম রয়েছে এই রেস্টুরেন্টের। তবে এই রেস্টুরেন্ট বরাদ্দের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যায় পার্কের কর্মকর্তাদের কাছে। সেই রেস্টুরেন্টটিই এবার কফি কর্নার নামে বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে অচিরেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রমনা পার্কের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রমনা চাইনিজ রেস্টুরেন্টটি বরাদ্দের ক্ষেত্রে এর আগে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব বলয় কাজ করত। রমনা পার্ক যে গণপূর্ত অধিদফতরের অধীনে, সেই অধিদফতরেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ দেওয়া হতো। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এখন থেকেই সজাগ না থাকলে এবার কফি কর্নার বরাদ্দের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
কফি কর্নারটির বিষয়ে জানতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী জামেলুর রহমান ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নাসিম খানের মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
পরে যোগাযোগ করা হলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ সরাবাংলাকে বলেন, কফি কর্নারের দরপত্র আহ্বানের এস্টিমেট এখনো আমার কাছে আসেনি। তবে রমনা কফি কর্নারের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমেই এটি বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখানে কেউ কোনো ধরনের প্রভাব খাটাতে পারবে না।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে গড়ে তোলা রমনা পার্কটির কাজ শেষ হতে সময় লাগে ২০ বছর। এরপর প্রায় ৯ দশক ধরে পার্কটি ঢাকাবাসীর চিত্তবিনোদন ও অবসর কাটানোসহ স্বাস্থ্যরক্ষায় অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে চলছে। এটি রীতিমতো ঢাকা শহরের ফুসফুস হিসেবেই পরিচিত সবার কাছে।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেন। এরপর এই পার্ক ঘিরে আর তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কেবল পার্কের চারপাশের দেয়ালগুলোতে লেগেছে নতুন রঙ, চারপাশে যোগ হয়েছে উঁচু লোহার রড। তবে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর রমনা পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনে ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এই কাজ প্রায় শেষ পথে। এখন শিশু প্রাঙ্গণটি সংস্কারের কাজ চলছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
টপ নিউজ নাম বদল রমনা কফি কর্নার রমনা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট রমনা পার্ক