শহরে একবার, গ্রামে বার বার!
২০ জুলাই ২০২২ ২১:৩৪
ঢাকা: পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সবে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেখানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সন্ধ্যা নামতেই যে গ্রামে ভুতুরে পরিস্থিতি নেমে আসতো, সেখানে আলো জ্বলতে শুরু করেছিল মাত্র। হাটে বাজারে ফটোকপি, কম্পিউটারের দোকান বসেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কৃষি ও ব্যবসা থেকে শুরু করে সবধরনের খবর পেতেন সেখানকার মানুষ। প্রযুক্তির এই সুবিধা যখন পেতে শুরু করেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ঠিক তখনই গ্রামগুলোতে ফের নেমে এসেছে সেই অতীতের অন্ধকার। বর্তমানে বিদ্যুৎ সংকট প্রবল হয়ে উঠেছে গ্রামে-গঞ্জে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, দিনে এক ঘণ্টার লোডশেডিং করার যে ঘোষণা, তা দক্ষিণাঞ্চলের ওই গ্রামগুলোর ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় সব গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি একই রকম। এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও সাত থেকে আট ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না গ্রামাঞ্চলে। তীব্র গরমে বিদ্যুতের বার বার আসা-যাওয়ায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, লোডশেডিংয়ে ক্ষেত্রে গ্রামে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার দ্রুতই সমাধান আসছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা এখন ৩ কোটি ১৬ লাখের বেশি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তারা আড়াই কোটি গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। এই সময়ে তারা ৩ লাখ ৩৯ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করেছে। ৬৪২টি নতুন সাবস্টেশন করেছে। দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে আরইবি সর্বোচ্চ ৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট একাই সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরইবি’র এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, গত তিন মাস ধরে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না তারা। তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই দিনের বেলায় চাহিদার ৩০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছিলেন না তারা। এখন সন্ধ্যার পর আরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। যে কারণে লোডশেডিং বেশি দিতে হচ্ছে।’ সারাদেশে আট হাজারেরও বেশি ফিডার রয়েছে আরইবির। এগুলোকে ভাগ করে কোথায় কখন কতটুকু লোডশেডিং করা হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী লোডশেডিংয়ের তালিকা করে সেভাবে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সারাদেশে আপাতত দিনে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়ানো হবে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো তার আওতাধীন এলাকাগুলোর মধ্যে কোন জায়গায় কখন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখবে সেই সূচি অনলাইনে আপলোড করতে থাকে। কিন্তু সেই সূচি গ্রামাঞ্চলে পালন করা হচ্ছে না বলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ আসছে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সন্দ্বীপসহ অনেক জায়গা থেকে এই অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ তীব্র গরমে এই লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও দেড় দুই ঘণ্টার নিচে বিদ্যুৎ আসছে না। দিনে রাতে অসংখ্যবার বিদ্যুৎ চলে যায় বলে জানান তারা। আর সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় হয়েছে গ্রাম এলাকায়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পরিস্থিতিতে দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেবে বিতরণ সংস্থাগুলো। কিন্তু বিতরণ সংস্থাগুলোকে লোডশেডিংয়ের শিডিউল করার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো সব সংস্থা এই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারেনি। ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং করছে। একইসঙ্গে দুই কোম্পানিই নিয়মিত দোকান-পাট সরকারে নির্দেশনা মানছে কি না তা মনিটর করছে।
এদিকে, সারাদেশে লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে সকালে বৈঠকে বসে পাওয়ার সেল। সেখানে শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং দেওয়ার জন্য বিতরণ সংস্থাগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন সারাবাংলাকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। সেজন্যই বৈঠকে বসা। তিনি জানান, বিতরণ সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে, যতটা সম্ভব শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং করা যায়। তবে এখনো দৈনিক দুই হাজার মেগাওয়ের বেশি বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২৯ লাখ। আর বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর সংখ্যা শতভাগ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ চিত্র ভিন্ন।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম