সরকারি অফিসে ২৫% বিদ্যুৎ, ২০% জ্বালানি সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত
২০ জুলাই ২০২২ ১৭:২৯
ঢাকা: জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি দফতরগুলোতে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি বিভিন্ন অফিসে জ্বালানির জন্য যে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে, সেটিও ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাসহ সংকটময় পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব যেন দেশে না পড়ে, সে কারণেই পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এসব কৃচ্ছ্রতাসাধনের নীতির পথে হাঁটছে সরকার।
বুধবার (২০ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের ব্যয় সাশ্রয় নীতির বিষয়ে কার্যকর কর্মপন্থা নিরূপণে সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। একইসঙ্গে বৈঠক থেকে নেওয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলোর কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, অফিস-আদালতে আমরা বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে পারি, যেন উৎপাদনও খুব বেশি ব্যাহত না হয়। অফিসে যদি দুইটি ফ্যানের জায়গায় একটি ফ্যান চালানো হয়, তাহলেও কিন্তু আমরা কাজ করতে পারব। সে জন্য আমরা সরকারি অফিসগুলোতে সহনীয় মাত্রায়, ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি।
তিনি বলেন, এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দফতরগুলোর জন্য জ্বালানি খাতের যে বাজেট বরাদ্দ আছে, এর ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের জন্য অর্থ বিভাগ থেকে সার্কুলার জারি করা হবে। অনেক আগে একবার এই খাতের বরাদ্দের ১০ শতাংশ কম ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। এবার বলা হচ্ছে— যারা জ্বালানি ব্যবহার করবে, তারা এখনকার চেয়ে ২০ শতাংশ কম ব্যবহার করবে।
সরকারের ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি অনুসরণে গৃহীত অন্যান্য সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে ড. কায়কাউস বলেন, অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার করতে হবে। অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এর আগে একবার সার্কুলার জারি করে বলা হয়েছিল, অফিসগুলোতে এসির তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রিতে রাখতে হবে। নতুন করে আমরা আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এসির তাপমাত্রা যেন ২৪/২৫ ডিগ্রির কম না হয়। এতে বিদ্যুতের ব্যবহার কিছুটা হলেও কমে যাবে।
মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখার জন্য বাজার মনিটরিং করা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মজুতদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির শুরু থেকেই বলে আসছেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘও এখন বলছে, খাদ্য সংকট হতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে যেন প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে কোনো না কোনো ধরনের ফসল ফলানো হয়। এই কার্যক্রম জোরদার করার জন্য সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নির্দেশনার কথা জানিয়ে মুখ্য সচিব কায়কাউস বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক গাড়ি চলাচল করে। সেখানে তেল-বিদ্যুতের ব্যবহার রয়েছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলেছি, শিক্ষার্থীরা যেন ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করে। অনেকে মিলে বাস বা মাইক্রোবাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রণালয়কে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের গতি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই বৈঠকে। মুখ্য সচিব বলেন, কীভাবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবাই যেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সহায়তা করে, সে বিষয়েও সচিবদের বলা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রনালয় যেন নিজস্ব ক্রয়পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সচিবদের।
সরকার ব্যয় সাশ্রয়ী ও কৃচ্ছ্রতাসাধনের নীতি গ্রহণ করলেও এ বিষয়গুলো নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলেও জানান মুখ্য সচিব ড. কায়কাউস। তিনি বলেন, অনেকের মধ্যে আসলে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতে আমাদের যেন কোনো ধরনের খরায় পড়তে না হয়, সে কারণে আগে থেকেই সংযমী হতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই মন্দা পরিস্থিতি পার করছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট তৈরি হচ্ছে অনেক দেশে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা আগে থেকেই এই পূর্বপ্রস্তুতিটা নিয়ে রাখছি, যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়।
তিনি বলেন, এ কারণে সবার আগে সরকার নিজেই কৃচ্ছ্রতাসাধনের দিকে গেছে। সরকার, সরকারি অফিস ও বিভিন্ন সংস্থা যেগুলো রয়েছে, এগুলো সাশ্রয় ও কৃচ্ছ্রতাসাধন করবে। বৈঠকে সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। তারাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নানা প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে যেসব বিষয় এখানে বলা হয়েছে, এই বিষয়গুলোতে সবাই একমত হয়েছেন।
কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপীই জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিচ্ছে। খাদ্য সংকটও রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার বেশ আগে থেকেই ব্যয় সংকোচন নীতির পথে হাঁটছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সাম্প্রতিক সময়ের প্রায় সব অনুষ্ঠানেই সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এসবের ধারাবাহিকতাতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নতুন এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
সারাবাংলা/টিআর
কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতি ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ব্যয় সংকোচন