Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৬ শর্তে মা-বাবার জিম্মায় ৬৫ শিশু, ২৫ দম্পত্তি ফিরলেন ঘরে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ জুলাই ২০২২ ১৯:৫৫

সুনামগঞ্জ: জেলায় লঘু অপরাধের কারণে ৫২ মামলায় অভিযুক্ত ৬৫ শিশুকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য ছয় শর্তে মা-বাবার স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আরেক রায়ে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝির কারণে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত ২৫ দম্পত্তিকে একসঙ্গে থাকার সুযোগ করে দিলেন আদালত।

বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দিয়েছেন। এর আগে, কয়েক দফায় ১৪৫ মামলায় ২০০ জন শিশুকে মা-বাবার কাছে এবং ২২৫টি মামলা আপোষে নিষ্পত্তি করে দাম্পত্য শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এই আদালত।

সুনামগঞ্জে মারামারি ও সামান্য পরিমাণে মাদক বহনসহ লঘু অপরাধের কারণে ৫২টি মামলায় ৬৫ শিশুকে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জড়ান হয়েছিল। এসব শিশুরা আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হত। এ কারণে শিশুদের ভবিষ্যৎ ও শিক্ষা জীবন ব্যহত হচ্ছিল। শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার এই অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

আদালত রায় প্রদানকালে বলেন, ‘এমনিতেই ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত শিশুজীবন, এরমধ্যে মামলা মোকদ্দমা থাকলে তাদের স্বাভাবিক ও শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবে।’ আদালত ছয় শর্তে তাদের মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে সকল শিশুর হাতে জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের বই, ফুল ও ডায়রি হাতে তুলে দেন আদালতের কর্মীরা।

ওই ছয় শর্তে বলা হয়, বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা; কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, হাস-মুরগি গবাধি পশু পালন, এসি-টিভি মোবাইল সার্ভিসিং- এসবের যেকোনো একটি বিষয়ে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ; প্রতিদিন দুইটি ভাল কাজ করে আদালতের দেওয়া ডায়েরিতে লিখে রাখা; প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগিয়ে পরিচর্চা করা; নিজ নিজ ধর্ম পালন করা এবং বাবা-মায়ের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা; মাদক থেকে দূর থাকা ও ভবিষ্যতে অপরাধের সঙ্গে না জড়ান।

এ সময়ে আদালত আরেকটি রায়ে ২৫টি মামলায় ২৫ দম্পত্তির দুর্বিষহ জীবনের অবসান ঘটান। যৌতুকের দাবিসহ নানাবিধ কারণে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত ২৫ নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। বিচারক উভয়ের বক্তব্য শুনে তাদের সন্তানসহ নিজেদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতর বন্ধন স্থাপনের ব্যবস্থা করে দেন।

সুনামগঞ্জ শিশু ও মানব পাচার আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী ও পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, এ রায়ের ফলে শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল, মা-বাবার দুঃশ্চিন্তার অবসান হলো এবং সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেলেন। অপর রায়ে স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকার যন্ত্রণা এবং তাদের সন্তানরা মা-বাবার বিচ্ছেদের অশান্তি থেকে মুক্তি পেল। আদালতের এমন উদ্যোগে বিচারপ্রার্থীদের মামলা দ্রুত নিস্পত্তি হচ্ছে, মামলা জটও কমে যাচ্ছে।

সারাবাংলা/এনএস

সুনামগঞ্জ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর