‘সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন কার্যক্রম আমাদের জন্য বিষফোঁড়া’
২০ জুলাই ২০২২ ২২:২২
ঢাকা: রাজধানীতে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোকে প্রকল্প প্রণয়নের সময় হতেই করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীন কার্যক্রম সিটি করপোরেশনের জন্য বিষফোঁড়া বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার (২০ জুলাই) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম’ আয়োজিত ‘রাজধানীর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক নগর সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএসসিসি মেয়র এই মন্তব্য করেন।
এসময় মেয়র বলেন, ‘বিভিন্ন (সেবা সংস্থার) সমন্বয়হীন কার্যক্রম আমাদের জন্য একেকটা বিষফোঁড়া। আমি আশা করব, এ বিষয়গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষ আরও সদয় বিবেচনা করবেন। প্রকল্প প্রণয়নের সময় আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। আমাদের পরিকল্পনার সঙ্গে মেলাবেন।’
সমন্বয়হীনতা প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে ডিএসসিসি’র মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমার পান্থকুঞ্জ পার্ক ১০ বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছে। ওদিক থেকে এসে আবার এদিক হয়ে কাঁটাবন দিয়ে বলে যাবে! কেন যাবে? এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তো ঢাকার মধ্যে নামার কথা না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে ঢাকার এক অদূর প্রান্ত থেকে আরেক অদূর প্রান্তের সরাসরি যোগাযোগের জন্য। ঢাকা থেকে যানবাহন উঠলে আর নামবে না। গাড়ি নামলে আবার এখানে যানজট সৃষ্টি হবে। আপনি আমার উদ্যানের উপরে বারোটা কলাম দিয়ে উদ্যান নষ্ট করে চলে যাবেন? তাহলে ঢাকাবাসী কি পাবে? ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কি পাবে? আমি যদি স্বার্থসংশ্লিষ্ট অংশীজন হয়ে থাকি তাহলে এই পরিকল্পনা করার সময় কেন আমাকে জানালেন না? এখন এসে আমাকে বলছেন- আমার জমি দিয়ে দিতে হবে। ওনাদের মতন ওনারা করবেন। ঢাকার উপরে এমন আগ্রাসন আমরা বসে বসে দেখব! আর পরে জনগণ যখন গালি দেবে, তখন বলবে নগরপিতা কই?’
ঢাকাবাসীর কল্যাণে প্রকল্প প্রণীত হলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে উল্লেখ করে মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘যেসব প্রকল্প ঢাকা এবং ঢাকাবাসীর উন্নয়নের জন্য ও পরিষেবা নিশ্চিতের জন্য হবে সেটি বাস্তবায়নের সর্বাগ্রে সহযোগিতা করা হবে।’
মেয়রকে নগরপিতা বলা হলেও দীর্ঘ ৫০ বছরেও করপোরেশনকে কোনো অভিভাবকত্ব দেওয়া হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘শুধু দৈনন্দিন পরিষেবার কাজ ছাড়া সিটি করপোরেশন উন্নয়নমুখী, শহরকেন্দ্রিক এবং একটি উন্নত রাজধানী গড়ার জন্য কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা কখনোই নেয়নি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ যেসব সরকারি সংস্থা পরিষেবা দিয়ে থাকে, তাদের প্রকল্পনির্ভর পরিকল্পনার ওপরে সিটি করপোরেশন চলেছে। ওয়াসা যেহেতু নর্দমাকেন্দ্রিক কাজ করত তারা একটি পরিকল্পনা করেছে। পরিবহন ক্ষেত্রে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিবাসন, আগ্রাসন, জনগোষ্ঠী একটি শহরের সকল কিছুকে বিবেচনা করে সামগ্রিকভাবে কোনো পরিকল্পনা আমরা দেখিনি। তাই, আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথমেই যে কাজটি শুরু করার চেষ্টা করেছি সেটি হলো করপোরেশনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা। আগামী ৩০ বছর ঢাকাকে আমরা কোনো পর্যায়ে নিতে চাই, ঢাকার উন্নয়ন কীভাবে করতে চাই, ঢাকার পরিষেবাগুলো কীভাবে নিশ্চিত করতে চাই এবং তা বাস্তবায়নের পথে কীভাবে যেতে পারি- সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করেই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি।’
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রফেসর ড. আকতার মাহমুদ। ঢাকার জনঘনত্বকে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেটা হলো জনঘনত্ব। ঢাকা শহরের জনঘনত্ব অত্যন্ত উচ্চ। এখানে গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৮ হাজার মানুষ বসবাস করে। কোনো কোনো ওয়ার্ডে এর চেয়েও অনেক বেশি মানুষ বসবাস করে।’
সংলাপে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিয়া ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ এসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি মি. কে চ্যাংলিয়াং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুনের সঞ্চালনায় ও সংগঠনের সভাপতি অমিতোষ পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ফারহানা শারমিন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শিপলু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরএফ/এনএস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস