‘বিএসএফ’র গুলিতে নিহত বাংলাদেশিদের সবাই অপরাধী’
২১ জুলাই ২০২২ ১৮:০১
ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশিদের সবাই অপরাধী বলে দাবি করেছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে পিলখানার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতরে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন বিএসএফ মহাপরিচালক। তার নেতৃত্বেই ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ নয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়।
এদিকে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে হত্যা কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি, কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারি। কমানো নয়, শূন্যের কোঠায় কীভাবে নামিয়ে আনতে পারি, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় তারাও সায় দিয়েছেন।’
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সীমান্তে একটা হত্যা মানে শুধু একটা মানুষের মৃত্যু নয়, এতে নিহতের পুরো পরিবার ভোগে। এলাকার মানুষের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যে পেশাদার সম্পর্ক, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব আমরা বিএসএফকে বুঝিয়েছি। তারাও বুঝেছে, আমরা সব সমস্যা একীভূত করে কীভাবে কমানো নয়, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারি। আমাদের যে স্পিরিট, সেটা কাজে লাগিয়ে আমরা আশাবাদী এটা সম্ভব।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা প্রবেশ করছেন জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘এভাবে ৫১ পরিবারের ২১২ রোহিঙ্গা সদস্য বাংলাদেশে ঢুকেছেন বলে বিজিবি নিশ্চিত হয়েছে।’
জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, ‘দালাল চক্রের কার্যক্রমকে কীভাবে প্রতিহত করা যায়, সেটা নিয়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিস্তারিত কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে সীমান্তে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিএসএফকে বলা হয়েছে। বিএসএফ এ নিয়ে আশ্বস্ত করেছে।’ সীমান্ত ছাড়াও হয়তো দুর্গম পথে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলেও জানান তিনি।
বিজিবি প্রধান আরও বলেন, ‘আমরা উভয় সীমান্ত বাহিনী চেষ্টা করছি গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করতে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক জোরদার করতে উদ্যোগী হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেছি।’
এসব বিষয়ে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদক ও মানব পাচার, বিভিন্ন চোরাচালান, অবৈধ সীমান্ত পারাপার ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অপরাধ দমনে একসঙ্গে কাজ করা হবে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে চলমান উন্নয়নমূলক কাজ যেগুলো বন্ধ ছিল তা চালুর বিষয়ে কথা হয়েছে। এখন থেকে উন্নয়নমূলক কাজ চলবে।’
উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই থেকে ঢাকায় পিলখানার বিজিবি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন। যৌথ আলোচনার দলিল সইয়ের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের পাঁচ দিনব্যাপী ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিসহ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম