কঠোর হচ্ছে ডিবি, কিশোররা সন্ধ্যার পর বাইরে থাকলেই আটক
২১ জুলাই ২০২২ ২২:৫৭
ঢাকা: কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কিশোর অপরাধ ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম প্রতিরোধে রাজধানীতে মাঠে নামছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সন্ধ্যার পর কিশোররা রাস্তায় বা পাড়া-মহল্লায় আড্ডারত হলেই আটক করা হবে তাদের।
পুলিশ বলছে, কিশোরদের থাকার কথা পড়ার টেবিলে। কিন্তু দিনে তো বটেই, সন্ধ্যার পরও তারা রাস্তায় থাকছে, বাইরে থাকছে। ধীরে ধরে তারাই জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে। কেউ কেউ হয়ে উঠছে ছিনতাইকারী, কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবনে, ধর্ষণের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। একই এলাকার কিশোররা গড়ে তুলছে কিশোর গ্যাং। এ পরিস্থিতিতেই কিশোরদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তিনি বলেন, কোনো কিশোর সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে থাকতে পারবে না। এই সময়ে তার ঘরের বাইরে থাকার কোনো যৌক্তিক কারণও নেই। এসময় তার পড়ার টেবিলে থাকার কথা। না হলেও ঘরে থাকবে।
তিনি বলেন, বাইরে আড্ডা দিতে দিতেই নানা ধরনের অপরাধীদের সংশ্রবে আসছে কিশোররা। অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এরকম বহু উদাহরণ আছে যে তারা কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। ইভটিজিং করছে, সংঘবদ্ধ চক্র হয়ে উঠছে। এভাবে ছোট ছোট অপরাধে জড়িত হতে হতে এক সময় ভয়ংকর অপরাধীর তালিকায় নাম লেখাচ্ছে কিশোররা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, একটা সময় গিয়ে কিশোররাই ছিনতাই, চুরি, মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ ধরে তাদের জেলে পাঠাচ্ছে। জেলখানায় তারা অন্যান্য অপরাধীদের সঙ্গে মিশে আরও বড় অপরাধের পরিকল্পনা করছে। কোনো অপরাধে গ্রেফতার হলে জামিনে বেরিয়ে আরও বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব কারণেই কিশোর অপরাধ ঠেকাতে এখনই অভিযান জরুরি বলে মনে করছি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, কিশোর অপরাধীদের ধরতে এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আমরা শিগগিরই অভিযান শুরু করব। রাজধানীর কোনো সড়কের মোড়ে, পাড়া মহল্লায় সন্ধ্যার পর কোনো কিশোর আড্ডা দিতে পারবে না। যারাই আড্ডা দেবে, তাদেরই পাকড়াও করা হবে। আমরা চাই, সন্ধ্যার পর বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা না দিয়ে তারা পড়ার টেবিলে থাকুক। বাসায় পরিবারের সাথে থাকুক। আমরা কাউকেই ছাড় দেবো না। সবাইকে ধরে আনা হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আপাতত সন্ধ্যার পর আড্ডা দেওয়ার জন্য বাইরে থাকা কিশোরদের সবাইকে আটক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেউ নিরাপরাধ হলে পরিবার এসে মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যাবে। মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আবারও পাওয়া গেলে তখন আর ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা অভিভাবকদের উদ্দেশে বলব— সন্তানকে ঘরে রাখুন। তারা যেন বাইরে অযথা আড্ডা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা মহানগরে কিশোর অপরাধী কেউ থাকতে পারবে না। আমরা কাজ করছি। অপরাধী যেই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। এতে বড় অভিযান পরিচালার প্রয়োজন হলে সেটিও করব।
ডিবি প্রধান বলেন, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা রয়েছে— কিশোর অপরাধী থেকেই ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠে। চুরি-ছিনতাইয়ে তারাই জড়িত থাকে। মোবাইল টান দেওয়াও তারাই প্রথমে শুরু করে। তাই কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পুলিশ বলছে, কিশোর অপরাধের কারণে বিভিন্ন ধরনের ছোট অপরাধের পাশাপাশি হত্যার মতো ঘটনাও কম নয়। এ কারণে কিশোর অপরাধী নিয়ন্ত্রণে এর আগে ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তাদের অনেককে গ্রেফতার করে কারাগার বা সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ছোটখাটো অপরাধে জড়িত অনেককে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরকম কিশোরদের অনেককেও আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার নজির রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর