অনাবৃষ্টিতে আমন আবাদে বেগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের
২২ জুলাই ২০২২ ০৯:৩০ | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২২ ১৫:১০
ঢাকা: বৃষ্টি না হওয়ায় ভরা মৌসুমেও আমনের চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষক। বর্ষাকালে তীব্র খরায় কোথাও কোথাও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক চাষ দিয়ে রাখা মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। নিচু জমিতেও চাষযোগ্য পানি নেই। ফলে এবার আমন মৌসুমেও চাষাবাদে বেগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকের। সারাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ জমিতে আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। তবে দুয়েক দিন ধরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আমরাও উদ্বিগ্ন ছিলাম। জমি চাষ দিয়ে চারা রোপন করা যাচ্ছিল না। এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দুয়েকদিন ধরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রতিবছরই আমন রোপণে বরেন্দ্র এলাকায় বেগ পোহাতে হয়। যেসব এলাকায় বিএডিসি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নলকূপ রয়েছে, সেখানে তা চালু করে আমন রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় আমন রোপণে এখন আর বেগ পোহাতে হবে না বলে আশা করছি। আমরা আমন রোপণের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে আমনের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত বীজতলা তৈরি হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৫১০ হেক্টর। বীজতলা তৈরিতে অগ্রগতির হার ৯০ ভাগ। এদিকে মৌসুমটিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ লাখ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আমন রোপণ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে। আমন আবাদে অগ্রগতির হার সাড়ে ৭ শতাংশ।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার একজন কৃষক জানান, আমন রোপণ এখনো শুরু হয়নি। গত দুই দিন কিছু বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন ধান রোপণ করা যাবে।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেল কবির সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে এখনো আমন রোপণ শুরু হয়নি। বীজতলায় ধানের চারা বড় হয়ে গেছে। কিন্তু বৃষ্টি নেই।
নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের কৃষক মো. শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, মাঠে কোনো পানি নেই। খরা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় বীজতলায় ধানের চারা লাল হয়ে গেছে। পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। নিচু কোনো জমিতেও পানি নেই। শ্রাবণের ১৫ তারিখের মধ্যে আমন রোপণ শেষ হওয়ার কথা। এখন শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ চলছে। অথচ কোনো বৃষ্টি নেই।
লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব কাদমার কৃষক আব্দুল খালেক সারাবাংলাকে বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধান লাগাতে দেরি হচ্ছে। মাঠ ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে যে বৃষ্টি হয়েছিল তখন জমি চাষ করা হয়েছিল ধান লাগানোর জন্য। বৃষ্টি না হওয়ায় জমিগুলো শুকিয়ে ফেঁটে গেছে। বৃষ্টি হলে এখন আবার নতুন করে চাষ করতে হবে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ জুলাই থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন রোপণ করা যায়। মূলত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত উচ্চফলনশীল জাতের চাষ হয়ে থাকে। এরপরে যে ধানের আবাদ হয় সেগুলো মূলত লেইট ভেরাইটি। তবে কৃষকরা ১৫ শ্রাবণ পর্যন্ত সময়কে আমন আবাদের ভরা মৌসুম বলে মনে করেন। সে হিসাবে আমন রোপনের ভর মৌসুম চলছে এখন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এএম