সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী
২৩ জুলাই ২০২২ ১৫:১১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ, সেগুলো আমাদের মোকাবিলা কেরতে হবে। বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ তারপর স্যাংশন, করোনাভাইরাস সবমিলে সেখান থেকেও অবশ্যই উত্তরণ আমাদের ঘটবে। কারণ আমাদের প্রশাসনে যারা আছেন, তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন, তারাই এটি সফলভাবে করতে পারবেন।
শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ৩১ জন কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২২’ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মনোনীতদের হাতে পদক তুলে দেন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই জনগণের অর্জিত অর্থ নিয়েই সবার বেতন-ভাতা আরাম-আয়েশ সবকিছু।কাজেই কাজ করতে হবে তাদের জন্য তাদের স্বার্থে, তাদের কল্যাণে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। আপনি যেন নির্বিঘ্নে আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার জন্য কিন্তু আমরা অনেক ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্যটাই এভাবে ছিল প্রশাসনিক অবকাঠামোগুলো আরও যুগোপযোগী করা।’
বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর ৯ তলা ভবন নির্মাণ করে দেয়াসহ প্রশিক্ষণটা বৃদ্ধি করে ভালো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করার উদ্যোগও নিয়ে সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আন্তরিকতার চেষ্টা করেছি আমাদের প্রশাসনটা ব্যবস্থা গণমুখী হবে। জনসেবক হবে। জনগণের জন্য কাজ করবে সেই প্রচেষ্টা নিয়েই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের সমস্যাগুলো দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছি। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, গাড়ি বা ফ্ল্যাট বা জমি কেনার জন্য বিশেষভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। অর্থ্যাৎ আপনারা সংসারের চিন্তা লাঘব করে জনগণের চিন্তা যেন করতে পারেন আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
জনপ্রশাসনে কর্মসম্পাদন চুক্তি শুদ্ধাচার ব্যবস্থা চালু করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘এই দক্ষ কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে যারা যোগ্য হচ্ছেন তাদেরকে একটা পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে যারা দায়িত্বে আসবেন এর মাধ্যমে তারা যেন আরও উৎসাহিত হবেন। এই কারণে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক নামকরণ করা হয়েছে।’
করোনাভাইরাস চলমান সংকটের মধ্যেও দেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার জন্য প্রজাতন্ত্রের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কথা অনেক ঝড় ছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। অনেক বাধা এসেছিল। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমরা পারব। কেন পারব না? বাংলাদেশের জনগণ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। জনগণই শক্তিই তো সবচেয়ে বড় শক্তি, সেই শক্তি নিয়েই এই ঘোষণা দিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে আমরা সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। যার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি আরও দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমি মনে করি আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি হওয়ার একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ফলে উত্তরবঙ্গ জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘একটি মানুষও না খেয়ে মরবে না। প্রতিটি মানুষ পেট ভরে খাবে, কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। ভূমিহীন গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দেব।’
জাতির পিতা শুরু করেছিলেন গুচ্ছগ্রাম তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু করার প্রসঙ্গ আজকে আমরা তা অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। একটি মানুষ যখন তার থাকার জায়গা পায় তখন তার জীবনটাই বদলে যায়। সে জীবন জীবিকার সুযোগ পায়। আর সে সুযোগটা আমরা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের হয়ত সামান্য কিছু এখন বাকি আছে। আরও ৫৬ হাজার নতুন ঘর আমরা করে দেব, হলে পরে বাংলাদেশের দুইটি জেলা ৫২টি উপজেলা আমরা ভূমিহীন গৃহহীন হিসাবে যারা ছিল তাদেরকে ঘরবাড়ি দিয়ে গৃহহীন ভূমিহীন মুক্ত হিসাবে জেলা এবং উপজেলা হিসাবে ঘোষণা দিতে পেরেছি। আমি আশা করি, আগামীতে আমরা সমগ্র বাংলাদেশকেই ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত, প্রত্যেকটা মানুষের একটা ঘর আছে ঠিকানা আছে সেটি আমরা নিশ্চিত করতে পারব।ইনশাআল্লাহ সেটি আমরা করতে পারব এবং এটি হবে। তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখা আমাদের জন্য আরও সহজ হবে।
‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এরইমধ্যে রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছি, পাশাপাশি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি সেটাও আমরা অর্জন করতে সক্ষম হবো’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আগামী দিনে যেন আরও বেশি করে পদক দিতে পারি তার জন্য সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। এই দেশ আমাদের, এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই। আমি দেশবাসীসহ আপনাদের সকলের কল্যাণ এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করি।’
জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা আজকে আমরা ইনশাআল্লাহ গড়ে তুলব। এখন আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। অনেক বাস্তবায়ন করেছি। আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। কাজেই চলমান বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জনপ্রশাসন সচিব কে এম আলী আজম।
সারাবাংলা/এনআর/একে