‘সংবিধান পরিবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে’
২৩ জুলাই ২০২২ ১৫:৫২
ঢাকা: জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২৩ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এমন একটি সময় উপনীত হয়েছি যখন প্রিয় বাংলাদেশ, গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। আমাদের ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রিয় রাষ্ট্র এই বাংলাদেশকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যে দেশের মানুষ একান্ন বছর আগে একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জন করেছিল আজকে সেই দেশের মানুষ তাদের ন্যূনতম যে অধিকার সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের যে স্বপ্ন ছিল সেই সময়ে একটি মুক্ত, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার, একটি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার, সামাজিক মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি, বাক স্বাধীনতা, নাগরিক স্বাধীনতা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার, সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা নির্মাণ করা। আজকে সেই দেশের মানুষ একটি শ্বাস রুদ্ধকর অবস্থায় বাস করছে।’
তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ এখন প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পায়, এই দেশের সাংবাদিকেরা প্রকাশ্যে লিখতে ভয় পান, বিচারপতিরা ন্যায়বিচার করতে ভয় পান এবং সাধারণ মানুষ বাসে ট্রেনে পাবলিক প্লেসে কথা বলতে ভয় পান। অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে ভয়-ভীতির ত্রাস সৃষ্টি করেছে সমগ্র দেশে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই ধরনের একটি রাষ্ট্রে আমরা পরিণত হয়েছি।’
‘আমাদের দুঃখ হয়, আমরা যখন যুদ্ধ করি তখন আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজকের এ অবস্থায় আসব আমরা তা চিন্তা করিনি। আজকে আওয়ামী লীগ এই রাষ্ট্রকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আমাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। গোটা দেশে একটা ভয় ও ভীতির আবহাওয়া তৈরি করে মানুষকে শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন যে প্রক্রিয়ায় শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তার ভিত্তি হচ্ছে বল প্রয়োগ, ভয়ের উত্থান, গুম, খুন, হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশ হেফাজতে হত্যা, মিথ্যা মামলা এবং আপনারা শুনলে অবাক হবেন যারা রাজনৈতিক কর্মী গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করছে এ রকম ৩৫ লক্ষ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’
আজকে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আজকে একটি উন্নয়নের মিথ তৈরি করা হয়েছে। এই উন্নয়নের মিথের ঢোল চতুর্দিকে বাজানো হচ্ছে। আর এই ভুল বাঁচানোর মধ্য দিয়ে মানুষকে বিপথে পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করা হচ্ছে। ইদানিংকালে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল ডাল তেল, লবণ, জ্বালানি তেল, গ্যাস পানির দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ সমস্ত সমস্যা সরকার তৈরি করেছে। আমরা এসব ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে চাই। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দিতে চাই।’
‘এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের মুক্তি পেতে হবে। আমাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এই গণবিরোধী এবং অনির্বাচিত সরকারকে অচিরেই পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মেন্ডেটপ্রাপ্ত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান সংকট উত্তরণের এটাই একমাত্র পথ।’
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংবাদিক কাদির কল্লোল, ফরিদ হোসেন, নজরুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে