‘মৎস্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ’
২৩ জুলাই ২০২২ ১৭:৪০
ঢাকা: নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাছ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সরকারের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘মৎস্য খাতে বাংলাদেশ একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ মাছ উৎপাদন। শুধু মাছের উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, নিরাপদ ও পুষ্টিকর মাছ উৎপাদনে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোক্তার কাছে আমরা নিরাপদ মাছ পৌঁছে দিতে চাই। এ লক্ষ্য নিয়ে ২৩ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ উদযাপন হচ্ছে।’
শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদফতরের সভা কক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রেজাউল করিম বলেন, ‘মিঠা পানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ সব ক্ষেত্রে আমাদের অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। বিগত ১৬ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ মৎস্যখাতের অবদান। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ স্থানে রয়েছে। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণে।’
তিনি বলেন, ‘একটা সময় মৎস্য খাতে যথাযথ পরিচর্যা না হওয়ায় ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছিল। আমাদের নিজস্ব মাছ একটা বিশাল অংশ হারিয়ে গিয়েছিল। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ৩৬ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মাছ যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে, যেখানে শতাধিক প্রকারের মাছ থাকবে। কোথাও কোনো মাছ হারিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলে তার রেণু ও পোনা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। এছাড়া নিজস্ব গবেষণা থেকে সুবর্ণ রুই নামক একটি দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক উৎপাদনশীল মাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশাল সমুদ্র জয়ের পর এর অভ্যন্তরে কত প্রকার মাছ আছে, কী সম্পদ আছে, প্রচলিত-অপ্রচলিত মাছ আছে সেগুলো অনুসন্ধান করার জন্য আমাদের আরভি মীন সন্ধানী জাহাজ কাজ করছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রচলিত-অপ্রচলিত বিশাল মৎস্য ভাণ্ডার রয়েছে। এই মৎস্যসম্পদ এক সময় আমাদের বড় ধরনের আয়ের উৎস হতে পারে।’
মাছ রফতানি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘ইলিশ পূর্বেই আমাদের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য ছিল। ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নতুন সংযুক্ত হয়েছে আমাদের বাগদা চিংড়ি। বিশ্বে বাগদা এখন বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে পরিচিত। এটি বিশ্বে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। পৃথিবীর প্রায় ৫২টি দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের মাছের চাহিদা রয়েছে। এসব দেশে বিভিন্নভাবে মাছ রফতানি হচ্ছে।’
করোনায় বিশ্বের অনেক দেশের মৎস্য খাতে বিপর্যস্ত অবস্থা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, এ সময় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনটি দেশ মৎস্য উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে। এ তিনটি দেশের একটি বাংলাদেশ, অপর দুটি দেশ মিশর ও ভিয়েতনাম। করোনার সময় মৎস্য উৎপাদনকারীরা বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়লে তাদের জন্য সরকার ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থা চালু করেছে।
তিনি আরও জানান, মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকাকালে যাতে মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে সরকার কাজ করছে।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও মো. আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. হেমায়েৎ হুসেন, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিন সকালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বণার্ঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/জিএস/এনএস
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ ৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম