বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলংকার মিল কোথায়?— ব্যাখ্যা দিলেন ফখরুল
২৩ জুলাই ২০২২ ১৮:২৭
ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলংকার মিল কোথায়— সে ব্যাপারে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা কয়েকটি বিষয় মিল দেখতে পারছি। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। যার প্রভাব এরইমধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে। আমরা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। এই সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে কিন্তু নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমদানি করা গ্যাসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এরইমধ্যে একটা বড় রকমের ক্রাইসিস শুরু হয়ে গেছে।’
‘সার কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, গ্যাস না পাওয়ার কারণে পোশাক কারখানাগুলো বিপদে পড়েছে। ফলে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বেকায়দার মধ্যে পড়েছে। অন্যান্য শিল্পকারখানাগুলো জ্বালানি সংকটে পড়েছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বৈদেশিক মজুদের পরিমাণ নিচের দিকে যাচ্ছে, রেমিট্যান্সে কমে যাচ্ছে। শ্রীলংকার মূল ক্রাইসিস ছিল রিজার্ভ। আজকে এই সরকার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়নের কথা বলে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে দিয়েছে। এই টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই। রফতানি কমে আসছে, উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে। ফলে ওই ক্রাইসিসগুলো এখন গভীর হচ্ছে। সে জন্য আমরা আশঙ্কা করছি যে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শ্রীলংকার মতো একটা অবস্থা তৈরি হতে পারে।’
শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত মিট দ্য ওকাবে (ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন) তিনি এ সব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘ব্যাক ডোরে কোনো সংলাপ নেই’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যাক ডোর বলে কোনো কথা নেই। আমাদের যা কিছু সব ফ্রন্ট ডোর। আমরা সবসময় সামনে থেকে প্রকাশ্য জনসভার ঘোষণা দিচ্ছি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপিসহ অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে তারা নির্বাচনে যাবে না।’
তাহলে কোনো সহিংসতায় যাচ্ছে কিনা? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি তো নির্ভর করবে সরকারের ওপর। এই সরকার এখন ড্রাইভিং সিটে। প্রত্যেকবারই সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হয় যেকোনো রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করার জন্য। তারা যদি কনফোনট্রেশন দেখতে না চায়, মারামারি কাটাকাটি দেখতে না চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে নতুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।’
আন্দোলনে জামায়াত ইসলামী অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছি— একটা জাতীয় ঐক্য তৈরি করার জন্য। সেখানে একটা বিষয় আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাব। সুতরাং এখানে এ বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।’
সরকারের পরিবর্তে বিএনপি বিকল্প কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবশ্যই। বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এবং বিএনপি তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত হয়েছে। তারও আগে বিএনপি দুইবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। বিএনপি হচ্ছে একমাত্র বিকল্প যা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।’
আগামী নির্বাচনে বিএনপি গেলে তার নেতা কে হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দলের নেতৃত্ব তো নির্ধারণ হয়ে আছে। দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নেত্রী, তার অবর্তমানে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নেতা। সুতরাং এখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই।’
যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে— ১৯৯০ সালেও যে আন্দোলন হয়েছিল- ৫ দল, ৭ দল ও ৮ দল। সেখানে কিন্তু যুগপৎ আন্দোলন হয়েছিল। সেই মডেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলছি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে তারা আন্দোলন শুরু করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবটাই সম্ভব যদি সরকার চায়। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা নির্বাচনে তখনই যাব যদি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই।’
‘সংবিধান বহুবার পরিবর্তন হয়েছে নির্বাচনের জন্য। ১৯৯০ সালে হয়েছে, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ তো সংবিধানের বহু অংশ পরিবর্তন করে দিয়েছে। সুতরাং চাইলে অবশ্যই হবে। ডকট্রেইন অব নেসেসিটি বলে একটা কথা আছে। সেই প্রয়োজনে জনগণের স্বার্থে। এখন এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন হলে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের রূপরেখার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন সরকার আমাদের সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের গঠনের বিষয়ে একমত হবে। তার আগে না। সরকার যদি বলে যে, নির্বাচনকালীন সরকার, নিরপেক্ষ সরকার, সহায়ক সরকার গঠন করা হবে- আমরা একমত তখন কীভাবে সেটি হবে, তা নিয়ে আমরা চিন্তা করে দেখব।’
তাহলে কি আলোচনা সুযোগ আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। আলোচনার পথ কোথায়? সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কথা বলতে চায় তখন আমরা সেটা দেখব। তার আগে তো না। আগে তাদের (সরকার) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে একমত হতে হবে। তার আগে তো নয়, অন্য বিষয়ে তো নয়ই।’
গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে বিএনপির প্রত্যাশা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে একটাই প্রত্যাশা করি যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য সবাই যার যার জায়গা থেকে ভুমিকা রাখবে।’
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু দিরে মধ্যেই আমরা স্টেটমেন্ট দিয়েছি। আমরা মনে করি যে, সব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা তার অধিকার আছে। ইউক্রেন একটা স্বাধীন দেশ। সেখানে কোনো ফরেন ইনভেশন আমরা কখনোই সমর্থন করিনি, আমরা করব না। প্রত্যেকটি দেশ যাতে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে আমরা সেটাতে বিশ্বাস করি। আমরা রাশিয়ার ইনভেশনকে অবশ্যই নিন্দা জানাই।’
রাশিয়া-ইউক্রেনে খাদ্যপণ্য বহির্বিশ্বে পাঠানোর সমঝোতার উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা মনে করি যে, উভয় দেশেরই যে দায়িত্ববোধ আছে বিশ্বমানবতার প্রতি- এটা তারই পরিচয় বহন করে।’
ওকাবের আহ্বায়ক বিবিসির সংবাদদাতা কাদির কল্লোল ও সদস্য সচিব জার্মান নিউজ এজেন্সি-ডিপিএ’র সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম মিঠুর সঞ্চালনায় মিট দ্য প্রেসের মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ওকাবের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফরিদ আহমেদ।
এ ছাড়া মিট দ্য ওকাব অনুষ্ঠানে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/একে