নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিশি সংস্থা নয়: জাসদ
২৪ জুলাই ২০২২ ১৫:৩১
ঢাকা: নির্বাচন কমিশনকে কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। রোববার (২৪ জুলাই) জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে দলটির ১৫ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে এই দাবি জানান।
জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই সেই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়সহ কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেই নির্বাচন কমিশনের জড়িত হওয়া বা মতামত, বক্তব্য, মন্তব্য প্রদান করা উচিত নয়। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিশি সংস্থা নয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এতে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ অন্য চার কমিশনারও এ সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
জাসদের পক্ষে ১৫ সদস্য প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির সহ-সভাপতি মীর আখতার, সাবেক কার্যকরী সভাপতি মো. রবিউল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান, রোকনুজামান রোকন প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে শিরীন আখতার বলেন, ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনবোধ করলে নির্বাচনকালে জনপ্রশাসনের কাজে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে ব্যবহার করতে পারবে।’
পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের চাহিদামতো নির্বাহী বিভাগকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত, নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন ও অসদাচারণের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সংবিধান ও আইনবহির্ভূত কোনো অসাংবিধানিক ও আইনসম্মত নয় এমন কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বা প্রস্তাবকে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি কতিপয় বিদেশি কূটনৈতিক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী এবং অযাচিতভাবে নাক গলিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ এ ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী অযাচিত নাক গলানোকে প্রশ্রয় না দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো সাংবিধানিক, আইনগত ও প্রশাসনিক ঘাটতি বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ অন্যান্য নির্বাচনী আইনে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন বা চাহিদা থাকলে নির্বাচন কমিশনের উচিত তা সুনির্দিষ্টভাবে আইনসভায় অর্থাৎ জাতীয় সংসদের কাছে উত্থাপন করা। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিও এমন প্রয়োজনবোধ করলে তা আইনসভায় অর্থাৎ জাতীয় সংসদের নিকট সুনির্দিষ্টভাবে উত্থাপন করতে পারেন।’
ইভিএম পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএম পদ্ধতি সংযোজনকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে স্বাগত জানায়। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে বাস্তবে কিছু সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। কিছু প্রশ্ন ও বিতর্কও তৈরি হয়েছে। জাসদ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকে চিহ্নিত সমস্যাসমূহ সমাধান করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছে।’
একইসঙ্গে ইভিএম পদ্ধতিতে কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য কাজ করার পাশাপাশি ব্যালট পদ্ধতিতেও ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘গণপ্রতিনিধত্ব আদেশের কঠোর প্রয়োগ করে ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় পরিচয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল এবং এ ধরনের দলকে নিবন্ধন প্রদান না করার দাবি জানাচ্ছে। জাসদ গণপ্রতিনিধত্ব আদেশ অনুযায়ী কঠোর প্রয়োগ করে একই নাম বা কাছাকাছি নামে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।’
নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার প্রসঙ্গে জাসদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে।
সারাবাংলা/জিএস/একে