নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন বোয়ালমারীর ইউএনও
২৫ জুলাই ২০২২ ১৪:৫০
ঢাকা: আদালতের নোটিশ জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিমকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদেশে আদালত ইউএনওকে ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন। একইসঙ্গে একই ঘটনায় অফিস সহকারী উকিল মিয়াকেও আরও সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করতে বলে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
সোমবার (২৫ জুলাই) এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে ইউএনও মো. রেজাউল করিমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব শফিক, অফিস সহকারী উকিল মিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোজাম্মেল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে গত ২১ জুন আদালতের নোটিশ জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিমকে ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ‘আপনি একটি পক্ষ নিয়ে যে আচরণ করেছেন তা সভ্য রাষ্ট্রের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।’ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ‘ছরোয়ার শেখ বনাম নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ’ এর এক মামলা ফরিদপুরের বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন। এ মামলার নোটিশ জারির জন্য ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারী উকিল মিয়াকে নোটিশ গ্রহণের অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু অফিস সহকারী উকিল মিয়া নোটিশ গ্রহণ না করে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তাদের বসিয়ে রাখেন। বিকেল ৪টায় পুনরায় উকিল মিয়ার কাছে গেলে তাদের ইউএনও অফিসের ওপর তলায় গিয়ে বসতে বলেন।
এ সময় নোটিশ জারিকারকরা বলেন, তাদের অন্যত্র নোটিশ জারি করার জন্য যেতে হবে। তখন উকিল মিয়া বলেন, তাতে আমার কী, জজ কোর্টের নোটিশ না রাখলে আমার কী হবে? তিনি এর চেয়ে বড় কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানান উকিল মিয়া। তিনি নোটিশটি পাশের টেবিলে জমা দিতে বলেন। কিন্তু পাশের টেবিলের দায়িত্বরত কর্মচারী নোটিশ গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় জারিকারক মেহেদী হাসান নোটিশ জারি না করে চলে আসার জন্য কামাল হোসেনকে বলেন। এ ছাড়া বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে বলে জানান।
তখন উকিল মিয়া বলেন, জজের (বিচারক) ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা নির্বাহী বিভাগের লোক। নোটিশ না রাখলে আমাদের কিছু হবে না। তখন জারিকারক মেহেদী হাসান ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য পুনরায় কামাল হোসেনকে বললে ওই সময় উকিল মিয়া নোটিশ বুঝে নেন।
তবে এরইমধ্যে উক্ত অফিসের একজন কর্মচারী বিষয়টি ইউএনওকে অবহিত করলে ইউএনও জারিকারকদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকেন। একইসঙ্গে ইউএনও অফিসের স্টাফদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের শাস্তি দেওয়ার হুমকি দেন।
ইউএনও এ সময় জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান উভয়ের মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেন এবং মুচলেকা দিয়ে চলে যেতে বলেন। এ সময় তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক মুচলেখা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেন।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জেলার বিচার প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানান জারিকারকদ্বয়। এ অভিযোগের অনুলিপি আইন ও বিচার বিভাগের সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল বরাবর পাঠান ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আকবর আলী শেখ।
পরে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ইউএনও ও অফিস সহকারীকে তলব করেন আদালত। তলব আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে হাইকোর্টে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ইউএরও ও অফিস সহকারী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত তাদের ভৎর্সনা করে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের (২৬ জুন) দিন দিন ধার্য করেন।
আজ আদেশের নির্ধারিত দিনে আদালত ইউএনওকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে অব্যাহতি দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে