ঢাকা: পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৫ জুলাই) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের প্রতি এ নির্দেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব শফিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান জানান, আদালত মিজানকে জামিন না দিয়ে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা: ২০১৯ সালের ২৪ জুন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ পরিচালক মনজুর মোর্শেদ বাদী হয়ে সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ডিআইজি মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান ও ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকে আসামি করা হয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে জোর করে বিয়ে করার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ডিআইজি মিজানকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক।
অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।
ঘুষ লেনদেনের মামলা:
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজান নিজেও এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গত বছর ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
২০১৯ সালের ১৬ জুলাই ৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের নেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
এরপর গত ৪ এপ্রিল নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন ডিআইজি মিজান।
পরবর্তীতে গত ১৮ এপ্রিল ডিআইজি মিজানের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক।