রমনা পার্কে অপরাধ: কঠোর হচ্ছে প্রশাসন
২৬ জুলাই ২০২২ ০৯:০০
ঢাকা: রাজধানীর ফুসফুসখ্যাত রমনা পার্কে অসামাজিক কার্যক্রম, মাদক ব্যবসার মতো অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে ‘ক্যান পার্টি’র দৌরাত্ম্য বেড়েছে। পার্ক কর্মরতাদেরও এসব কার্যক্রম জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জনবলের ঘাটতি থাকলেও এসব বিষয় নিয়ে অচিরেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীও জানিয়েছেন, রমনা পার্কে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে সব ব্যবস্থা তারা নেবেন।
ইট-কংক্রিটের শহর রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের এক চিলতে অবসরের জায়গা রমনা পার্ক। ব্রিটিশ আমল থেকেই ঢাকার বাসিন্দারা বিনোদন, শরীর চর্চা আর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য বেছে নেন এই পার্ককে। তবে মাঝে মাঝেই এই পার্ক ঘিরে অসামাজিক কার্যক্রম ও অপরাধ প্রবণতার তথ্য পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক সময়েও এমন অভিযোগ বেশি পাওয়া যাচ্ছে পার্কে নিয়মিত যাতায়াতকারীদের কাছ থেকে।
সম্প্রতি রমনা পার্কের এমন পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় সারাবাংলা ডটনেটে। তাতে উঠে এসেছে ভুক্তভোগীদের কথা। তারা বলছেন, দুপুরের দিকে ব্যায়াম করতে আসা লোকজন কম থাকায় রমনা পার্কে উৎপাত বেড়ে যায় এক শ্রেণির মানুষের। এরা প্যান্টের সবগুলো পকেটে সফট ড্রিংকসের একাধিক বোতল, শার্টের পকেটে কম দামি চকলেট নিয়ে ঘুরতে থাকেন। এদের বলা হয় ‘ক্যান পার্টি’। হঠাৎ করে লোকজন কম— এমন জায়গায় কোনো ছেলে-মেয়ে বসে থাকলে গিয়ে বোতল খুলে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয় তারা। বিনিময়ে ৩/৪শ টাকা পর্যন্ত জোর করে আদায় করে নেয়। টাকা না দিলে খারাপ আচরণ করে এই চক্রের সদস্যরা।
রমনা পার্কের একটু নির্জন এলাকায় দিন-দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মাদক ব্যবসার। নিরাপত্তাকর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা কর্তব্যরত থাকলেও এরকম ঘটনায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। রমনা পার্কে নিয়মিত যাতায়াত করেন— এমন মানুষেরা বলছেন, এসব নিরাপত্তাকর্মী ও আনসার সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করেই এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে।
দিন দশেক আগে সারাবাংলার সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর অবশ্য ‘ক্যান পার্টি’র দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমেছে বলে জানাচ্ছেন পার্কে যাতায়াতকারীরা। আনসারদের টহলও বাড়ানো হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার সারাবাংলাকে বলেন, এত বড় ৬৮ একর জমি নিয়ে পার্কের জন্য আনসার সদস্য মাত্র ৩৫ জন। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আনসারের সদস্য বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে এত বড় পার্কের নিরাপত্তার দেখভাল করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, টহল আনসারদের জন্য সাইকেলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাহলে তারা দ্রুত পুরো পার্কটি ঘুরে দেখতে পারবেন। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনের কাছের দেয়ালসহ অন্য দেয়ালগুলোও সংস্কার করা প্রয়োজন। এগুলো করা গেলে রাতে দেয়াল টপকে অপরাধীরা পার্কে ঢুকতে পারবে না।
রমনায় কর্মরত অপর এক কর্মচারী জানান, রাত ১০ টা ১১ টায় রমনা পার্কে অনেকে ঘুরতে এসে নিজেদের ভিআইপি বলে পরিচয় দেয়। তাদের কেউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি করে, কেউ আবার নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে থাকে। তখন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা বিপাকে পড়ে।
ওই কর্মচারী সারাবাংলাকে বলেন, এই ভিআইপি কারা? রমনা দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কেনই বা তাদের রমনায় ঢুকতে দেওয়ার জন্য আনসার সদস্যকে ফোন করে?
রমনা পার্কে কর্মরত গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, রমনা পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত। রাতেতো উম্মুক্ত হতে পরে না? রমনা পার্কের পূর্ব দিকের পেছনের সড়কটি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ কূটনীতিকদের মতো সব ভিভিআইপিদের যাতায়াতে ব্যবহৃত হয়। এর পেছনে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, অন্য দিকে মন্ত্রী পাড়া। আরেক পাশে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। সব মিলিয়ে এটি স্পর্শকাতর একটি জায়গায়। অথচ সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় এই এলাকায় উগ্রপন্থিদের আনাগোনা ছিল। তাদের লিফলেটও পাওয়া যেত। এখনো এই এলাকায় তাদের যাতায়াত রয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলা যায় না।
তারা আরও বলেন, রমনা পার্কের অনেক স্থানেই ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো রয়েছে। তবে সেগুলো ঠিকমতো মনিটরিং করা হয় না। ফলে এই সিসি ক্যামেরাগুলো সেভাবে কাজে লাগছে না। এ পরিস্থিতিতে তারা সিসি ক্যামেরা মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের টহল আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, রমনা পার্কের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। অনেকটা কাজ শেষ হয়েছে, আরও কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলোও শেষ হয়ে যাবে। রমনা পার্কে একটি সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা কিছু করা দরকার, আমরা করব। এই পার্ককে সবার জন্য নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগ রয়েছে, রমনা পার্কের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার পেছনে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রমনা পার্কে গণপূর্তের যেসব কর্মকর্তারা বেশি সময় ধরে দায়িত্বে আছেন এবং অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম