মাটিরাঙায় ইউএনও’র বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ
২৫ জুলাই ২০২২ ২৩:১৩
খাগড়াছড়ি: মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তৃলা দেবের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে ঘর নির্মাণের জন্য অর্থ আদায়, টিআর, কাবিখা/কাবিটা প্রকল্প থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন আদায়, গুচ্ছগ্রামে কার্ড প্রতি কমিশন আদায়, কার্ডের নামে পরিবর্তনের জন্য ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায়সহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাটিরাঙার তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা।
ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘মাটিরাঙার ইউএনও নিজের মনোনীত ঠিকাদার দিয়ে তবলছড়ি ইউনিয়নে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ বাবদ তিনি তার (ইউএনও) মনোনীত ঠিকাদারদের দিয়ে ২০ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন। এছাড়া ঘর নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। যারা ঘর বরাদ্দ পেয়েছে তাদের নির্মাণসামগ্রী বহনের ব্যয় বহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
‘গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের জন্য সরকার কৃর্তক প্রদত্ত টিআর, কাবিখা/কাবিটা প্রকল্প থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন আদায় করা হচ্ছে। সেই টাকা যায় ইউএনও’র পকেটে। ইউএনও তবলছড়ি ইউনিয়নের ৪টি গুচ্ছগ্রামে ১৩৫২টি কার্ড থেকে ৩৮ টাকা করে মোট ৫১ হাজার হাজার ৩৭৬ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। টাকা ছাড়া তিনি রেশন ছাড় দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় আমি তা দিতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া সরকারি কোন নির্দেশনা ছাড়া ১৪ জন কার্ডধারীর ৬ মাসের রেশন বিতরণ না করে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা নিয়ে যান’, বলেও অভিযোগ ইউটি চেয়ারম্যানের।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার সিএ মুকুল কান্তি চাকমা, পিয়ন জাহেরুল ইসলামের মাধ্যমে গুচ্ছগ্রামের অর্থ সংগ্রহ করেন। এছাড়া ইউএনও তার স্বজন দীলিপ কুমার সাহা ও সাবেক ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান খান বকুলের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ বাবদ অর্থ সংগ্রহ করেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৃলা দেবের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ইউপি সদস্যরাও ইউএনওর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন। তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওর্য়াডের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমি টিআর প্রকল্পের আওতায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। পরবর্তীতে আমার কাছ ১৫ শতাংশ কমিশন নেওয়া হয়। এছাড়া আমার ওয়ার্ডের সরকারি ঘর বাবদ ইউএনও মনোনীত প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান খান বকুল উপকারভোগী থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে, আরও ৫ হাজার টাকা দাবি করেছে।’
তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম, ১ নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য মো. আহম্মেদ উল্ল্যাহ কামাল বলেন, “টিআরে প্রতিটি প্রকল্প থেকে ইউএনও’র প্রতিনিধি রুহুল আমিন আমাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন।”
ঘরের জন্য টাকা দেওয়া ভুক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ ঘর করার মতো টাকা নাই। একটা ঘরের জন্য প্রথমে আবেদন করি বকুল মেম্বার বলেছে ঘর দিবে। কিছুদিন পর বলে টাকা দিতে হবে কিন্তু টাকা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আমাদের নাই। পরে একজন থেকে ২০ হাজার টাকা লাভের উপরে নিয়ে দিয়েছি, কিন্তু ঘর দিচ্ছেনা পরে আরও ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনও ঘর আসেনি।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃলা দেব বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। গুচ্ছগ্রাম, টিআর কবিখা, কবিটা ও আশ্রয়ণ প্রকল্প সবগুলোই সরকারি কাজ। সরকারি বিধি মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে যিনি অভিযোগ করেছেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের কাছে কাজের সব ডকুমেন্টস আছে।’
অফিস স্টাফ ও নিকট আত্মীয়দের দিয়ে উৎকোচের অর্থ আদায়ের অভিযোগ বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এসবের কোনো সত্যতা নেই।’
সারাবাংলা/এমও