খোলাবাজারে ডলার এখন ১১২ টাকা
২৬ জুলাই ২০২২ ১৯:৫৭
ঢাকা: ডলারের সংকট থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না বাংলাদেশ। প্রতিদিনই অস্থিরতা বাড়ছে ডলারের বাজারে। বিপরীতে কমছে টাকার মান। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলার কিনতে গ্রাহককে গুনতে হয়েছে ১১০ থেকে ১১২ টাকা।
আগের দিন সোমবার কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায়।
এদিকে, মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ডলারের দামের চেয়ে কার্ব মার্কেটে ১৭ থেকে ১৮ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি হয়েছে। একে অস্বাভাবিক বলেও মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে এটা স্বাভাবিক হলেও কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত দামে যে ব্যবধান তা একেবারেই অস্বাভাবিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে এখানে আরও আগেই হস্তক্ষেপ করা দরকার ছিল। এখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ফলে এই অবস্থায়ই ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ এখন অনেকেই ডলার কিনে ধরে রাখছে। ফলে ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে এটা যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে আশ্চর্শ হওয়ার কিছু নেই। নানান গুজবের কারণে এর দাম বাড়ছে।
তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমাদের অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত মে মাসে শুরুতে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। বর্তমানে কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকায়। ফলে সর্বশেষ দুই থেকে আড়াই মাসের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে ২৬ থেকে ২৭ টাকা। এতে করে আমাদের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাবে আড়াই লাখ কোটি টাকা। কারণ আমরা টাকা দিয়ে ডলার কিনে সেই ডলার দিয়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ফলে ডলারের দাম বাড়ার কারণে সরকারি খাতে এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
অন্যদিকে, রেইনবো মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। আমরা ডলার কিনেতে পারছি না। ডলারের তীব্র সংকট চলছে। সে কারণেই ডলারের দাম বাড়তির দিকে।
তিনি বলেন, আজ নগদ ডলার বিক্রি করছি ১১০ থেকে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা করে। আর কিনছি ১০৯ থেকে ১১০ টাকায়। ফলে এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না।
রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ডলার কী বিক্রি করবো, ডলারতো পাচ্ছি না। আগে প্রতিদিন ৪/৫ হাজার ডলার বিক্রি করতাম এখন ২০০ থেকে ৩০০ ডলার বিক্রি করতে পারছি না। কারণ ডলার নেই।
অপরদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, রফতানির তুলনায় আমদানির ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বাড়ছে। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। বাজারের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রযোজন অনুযায়ী ডলার সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।
গত কয়েক বছরের ডলারের রেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এ সময় মুদ্রাবাজার অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। ২০২১ সালের শেষের দিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা পরিশোধ করতে গিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে কমতে শুরু করে টাকার মান।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো এক ডলার ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ৮৬ টাকা, গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে ডলারের রেট ২০ পয়সা বেড়ে হয় ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। গত ২৭ এপ্রিল তা আরও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এরপর গত ১০ মে ৫ পয়সা, গত ১৬ মে ৮০ পয়সা বেড়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। গত ২৯ মে দেশে ডলারের এক রেট ৮৯ টাকা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু পরবর্তীতে এই রেট উঠিয়ে দিয়ে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ১১ বার বাড়লো ডলারের দাম। সর্বশেষ গতকাল ২৫ জুলাই ডলারের দাম ২৫ পয়সা বেড়ে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
সারাবাংলা/জিএস/একেএম