Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একত্রে কাজ করতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুলাই ২০২২ ১৪:৪৭

ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখেছেন যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) প্রয়োগ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পরবর্তী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আন্তঃ ডি-৮ বাণিজ্য দ্বিগুণ করার সুযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকায় অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক জোট ডি-৮’র ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ২০ তম অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার (২৭ জুলাই) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটি উদযাপন করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ডি-৮ এখন সমন্বয় তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করতে প্রস্তুত। রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং আমাদের সরকারি ও বেসরকারি খাতের অর্থপূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অপার সম্ভাবনা যদি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায় তাহলে একটি অর্থনৈতিক ব্লক হিসেবে শক্তি বৃদ্ধি পাবে।’

সরকার প্রধান জানান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং তুরস্কের মত অন্তর্ভুক্ত ডি-৮ দেশগুলো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করছে শুনে তিনি আনন্দিত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এটি আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে। বাধাগুলিকে উদারীকরণ করবে এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উদ্দীপিত করবে।’

প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিতীয় ডি-৮ সিসিআই সাধারণ অধিবেশনে এবং বিজনেস এক্সপোতে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের চেম্বারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, যে সময় আমরা সবাই কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত ছিলাম, সে সময় রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন করে বিপদে ঠেলে দিয়েছে। সংঘাত এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা খাদ্য, সার, শক্তি ও বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত করেছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি বহন করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমাদের সকলের উচিত সাহসের সাথে এই মানবিক সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সংঘাত, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ব কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কাজেই, শক্তিশালী বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রয়োজন এবং বৈশ্বিক সংহতি এই লক্ষে আগের চেয়ে আরও বেশি মনোযোগের দাবি রাখে।’

প্রধানমন্ত্রী ডি-৮ নেতাদের বিবেচনায় নেয়ার জন্য পাঁচটি প্রস্তাব রাখেন প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন যে পিটিএ বাস্তবায়ন একটি সফল ডি-৮ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান কারণ দেশগুলোর বড় দেশীয় বাজার এবং একটি সম্মিলিত বাজার রয়েছে তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে।

তিনি বলেন, আন্তঃ-ডি-৮ বাণিজ্য আমাদের ব্যবসার সম্ভাবনা এবং সুযোগগুলোকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। আগামী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আন্তঃ-ডি-৮ বাণিজ্য দ্বিগুণ করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদস্য দেশগুলোর বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গা দিতে প্রস্তুত। আমরা যদি এখনই প্রক্রিয়া শুরু করি, তাহলে আগামী দশকের মধ্যে আমাদের একটি শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, আইসিটি এমন একটি ক্ষেত্র যার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ডি-৮ দেশের যুবকদের শক্তিশালী কর্মশক্তিতে পরিণত করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ ৪০ বছরের নিচে এবং আমাদের সাড়ে ৬ লাখ নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। এই বিশাল জনশক্তিকে আমরা আইটি ভিত্তিক শিল্প তৈরি করতে এবং তরুণদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারি।

চতুর্থত তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ডি-৮-এর বৈচিত্র্যময় কৃষি উৎপাদনে মনোনিবেশ করা উচিত। বাংলাদেশ তার সেরা অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতা অন্যান্য ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। আগামী দশকের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া উচিত্।

পঞ্চম এবং চূড়ান্ত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্ত ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প শক্তির উৎসগুলোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমি প্রস্তাব করি যে ডি-৮ বিকল্প শক্তিতে দক্ষতা আছে এমন অন্যান্য দেশগুলিকে সম্পৃক্ত করে সক্ষমতা বিকাশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুপাক্ষিকতা, সংহতি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি বৈশ্বিক বিশ্বব্যবস্থার কল্পনা করেছিলেন। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও বাংলাদেশ একই আদর্শে বিশ্বাস করে এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার সুবিধা কাজে লাগাতে অবিচল থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব প্রশমিত করতে এবং কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধির গতিপথ পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত, আমরা ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য ২৮টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা আমাদের জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এই প্যাকেজগুলো থেকে মোট ৬৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ এবং ১ লাখ ১৮ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ খুব কম দেশের মধ্যে একটি যারা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সফলভাবে তার জনগোষ্ঠীকে টিকা দিয়েছে। কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার সূচকে বাংলাদেশ ১২১টি দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে এবং দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ সব সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং মাথাপিছু আয় ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং শক্তিশালী কৃষি প্রবৃদ্ধি দেশটিকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা রয়েছে এবং প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৯৭.৮১% হয়েছে, নবজাতকের মৃত্যুর হার কমে প্রতি ১০০০ জনে ২৮ এ নেমে এসেছে এবং মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭২ বছর ৮ মাসে।

তিনি বলেন, ৯৮ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যাকে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি সেবার প্রবেশাধিকার ডিজিটাল ও সহজ করা হয়েছে এবং জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণমূলক কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

শেখ অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির সকল ক্ষেত্রে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথকে প্রশস্ত করেছে। গত মাসে আমরা দেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতু খুলে দিয়েছি, যা সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত একটি প্রকৌশল বিস্ময়। এই সেতুটি আমাদের জিডিপিতে ১.২৩% অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক আইটি পার্কসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ভিশন বাস্তবায়নে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে। তবে, উন্নত বাংলাদেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপে একটি অনন্য হাইড্রো-মরফোলজিক্যাল সিস্টেমে অবস্থিত এবং একটি ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলরেখাসহ বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চরম। যেহেতু আমরা শার্ম আল শেখে কোপ-২৭-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, টেকসই অংশীদারিত্বই কেবল কঠিন পথ পাড়ি দিতে আমাদের জন্য সহায়ক হতে পারে’। একশ’ কোটির বেশি জনসংখ্যার ডি-৮ দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ আমাদের উদার, বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ নীতি এবং বিদেশী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে।’ বাংলাদেশের রফতানি আয় ২০১০ সালে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে গত অর্থবছরে ৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতি, ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৫তম অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হবে। আমরা ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নের দিক নির্দেশনা মাথায় রেখে জনগণের সমৃদ্ধির অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুন অংশীদারিত্বের দিকে তাকিয়ে আছি।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ডি-৮ মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইসিয়াকা আব্দুল কাদির ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডি-৮সিসিআই)শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
অনুষ্ঠানে ডি-৮-এর উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ১৫ জুন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ইস্তাম্বুল ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ডি-৮ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়েছিল।

সারাবাংলা/এনআর/এসএসএ

প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর