কৃষিক্ষেত্রে এআইপি সম্মাননা পেলেন ১৩ জন
২৭ জুলাই ২০২২ ১৯:০৪
ঢাকা: প্রথমবারের মতো ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি)’-২০২০ সম্মাননা পেয়েছেন ১৩ জন। কৃষি মন্ত্রণালয় এই পুরস্কার দিয়েছে। কৃষিকাজ করে এরকম জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় অভিভূত ও আবেগে আপ্লুত হয়েছেন সম্মাননা প্রাপ্তরা।
বুধবার (২৭ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা দেওয়া হয়। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ সম্মাননা প্রদান করেন।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কৃষির সাফল্যের অন্যতম কারিগর দেশের কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, খামারিসহ কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্তদের প্রতি বৎসর সম্মাননা জানানোর জন্য এআইপি একটি মহৎ উদ্যোগ। কৃষকদের সম্মান জানানোর জন্য এটি একটি নতুন উদাহরণ। এআইপি সম্মাননা প্রবর্তন কৃষিখাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর ফলে কৃষি পেশার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এআইপি সম্মাননা দিয়ে আমরা কৃষকসহ কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্তদেরকে সম্মানিত করেছি, নিজেকে সম্মানিত করেছি এবং সেইসাথে জাতিকেও সম্মানিত করেছি। আগামী দিনের কৃষিকে আমরা বাণিজ্যিক ও সম্মানজনক পেশা হিসাবে উন্নীত করতে চাই। কৃষিতে শিক্ষিত, মেধাবী ও সৃজনশীল তরুণদের আকৃষ্ট করতে চাই। এ সম্মাননা এক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’
বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বিভাগে এআইপি সম্মাননা প্রাপ্ত মোছা. নুরুন্নাহার বেগম অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘কৃষিকাজ করে এত বড় সম্মান পাওয়া যাবে আমরা কল্পনাও করিনি। আমাকে কেউ ১০ লাখ টাকা দিক, আমি তা চাই না। কিন্তু এ সম্মাননা অনেক বড় পাওয়া।’ তিনি বলেন, ‘মাটিকে ঘুষ দেওয়া লাগে না। মাটির সঙ্গে পরিশ্রম করলে, মাটি আমাদের সাথে কথা বলে। আমাদের মতো কৃষককে এত বড় সম্মাননা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
এআইপি সম্মাননাপ্রাপ্ত বিসমিল্লাহ মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামারের মো. সামছুদ্দিন কালু অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘মাছ ব্যবসা শুরু করার সময় চৌধুরী বংশের আমার এক বন্ধু মানসম্মানের ভয়ে ব্যবসায় আসেনি। আর আজ আমার মতো একজন মাইচ্ছ্য বা চাড়ালকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এআইপি সম্মানে ভূষিত করেছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। এ দেখে পুরো জাতি জাগ্রত হবে।’
এআইপি সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। সভাপতিত্ব করেন কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
২০২০ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) পেয়েছেন ১৩ জন। তারা হলেন- কৃষি উদ্ভাবন বিভাগে (জাত/প্রযুক্তি) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান (বাউধান-৩ এর জাত উদ্ভাবন), এ আর মালিক সিডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউস সোপান মালিক (২টি বীজ আলুসহ মোট ১০টি সবজির জাত উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ), ফিউচার অর্গানিক ফার্মের সৈয়দ আব্দুল মতিন (মেহগনি ফলের বীজ থেকে তেল তৈরী যা জৈব বালাইনাশক প্রস্তুত), আলীম ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের আলীমুছ ছাদাত চৌধুরী (আলীম পাওয়ার ট্রিলার উদ্ভাবন)।
কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বিভাগে ছয় জন সম্মাননা পেয়েছেন। তারা হলেন- নাটোরের দৃষ্টান্ত অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সাসির মো. সেলিম রেজা, ঠাকুরগাঁওয়ের মো. মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী, ঝালকাঠির এশা ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার ফার্ম’র মো. মাহফুজুর রহমান, পিরোজপুরের জাগো কেঁচো সার উৎপাদন খামারের প্রোপাইটার মো.বদরুল হায়দার বেপারী, পটুয়াখালীর নুর জাহান গার্ডেনের মো. শাহবাজ হোসেন খান, কুমিল্লার বিছমিল্লাহ মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামারের মো. সামছুদ্দিন (কালু)।
স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি সংগঠন বিভাগে নওগাঁর শাহ্ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের জাহাঙ্গীর আলম শাহ। এদিকে, বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বিভাগে নির্বাচিত হয়েছেন দু’জন। তারা হলেন- পাবনার নুরুন্নাহার কৃষি খামারের মোছা. নুরুন্নাহার বেগম এবং একই জেলার মা-মণি কৃষি খামারের মো. শাহজাহান আলী বাদশা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম