Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লিটারে আরও ২০ টাকা বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুলাই ২০২২ ১৫:২৯

ঢাকা: বছর না ঘুরতেই আরেক দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। শিগগিরই জ্বালানি তেলের নতুন মূল্যের ঘোষণা আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চূড়ান্ত, এখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়। এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ যখন তীব্র মূল্যস্ফীতির সঙ্গে টিকে থাকার সংগ্রাম করছে, তখন জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি জনগণকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হবে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমিয়ে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশে দুই প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা আর তেল সরবরাহ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির সুত্র অনুযায়ী, বছরে ৬২ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ ডিজেল, ৪ দশমিক ৮ শতাংশ অকটেন, ৬ শতাংশ অপরিশোধিত তেল। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি -সৌদি আরামকো এবং আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড-অ্যাডনক থেকে এই তেল কেনা হয়। এই পরিমাণ তেলের মধ্যে ৪০ লাখ টন আমদানি করা হয় ডিজেল। আমদানি করা হয় ফার্নেস অয়েল, পেট্রোলসহ আরও কিছু তেল, যার পরিমাণ খুবই কম। এসব তেল কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন- কেপিসি, মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড, এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি, চীনের পেট্রোচায়না, পিটিই লিমিটেড ও ইউনিপেক (সিঙ্গাপুর) ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে কিনে থাকে বাংলাদেশ। এর বাইরে খোলা বাজার থেকেও কেনা হয়।

কিন্তু গত বছর বিশ্বজুড়ে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে গেলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলার দাম উঠে গেলে ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশের বাজারে লিটার প্রতি ডিজেল অকটেনের দাম ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট মুড তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলার ছাড়িয়ে যায়। যদিও পরে তা কমে ১০৫ থেকে ১০০ ডলারের মধ্যেই ওঠানামা করতে থাকে। কিন্তু এই বর্ধিত মূল্যে জ্বালানি আমদানি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

বিপিসি সূত্র বলছে, সাধারণত ৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে বিপিসিকে লোকসান গুণতে হয়। সেখানে টানা প্রায় আট মাস ধরে ১০০ ডলারের ওপরে ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে দৈনিক ২০ কোটি থেকে বিপিসি লোকসান গুণতে গুণতে এখন একশ কোটি পার করেছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানির দর সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিকসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ডিজেলে সবচেয়ে বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ডিজেলের দাম বেশি বাড়বে। সেটা হয়ত লিটার প্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা হতে পারে। অকটেনসহ অন্যান্য তেলের ক্ষেত্রে লিটার প্রতি দুই থেকে তিন টাকা সমন্বয় করার চিন্তা করা হচ্ছে।

এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বিভিন্ন সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলেছেন।

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ইতোমধ্যে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমিয়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতি বাড়াতে যাচ্ছে তেলের দাম। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে এর প্রভাব পড়বে পরিবহনে, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) অধ্যাপক এম শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, একদিকে লোডশেডিং আবার যদি তেলের দাম বাড়ানো হয়। এটা তো সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে। আমি তো বলবো জনগণকে ক্রসফায়ার দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। কারণ দাম বাড়িয়ে তো সাপ্লাই বাড়াতে পারবে না।

তিনি দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, দাম বাড়ানোর এখতিয়ার বিপিসি কিংবা জ্বালানি বিভাগের নেই। দাম বাড়াতে হলে প্রস্তাব যাবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে। কমিশন আইন মেনে গণশুণানি করে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে। কিন্তু এখন সরকার যে প্রক্রিয়ায় দাম বাড়াতে চাচ্ছে তা বিইআরসির আইন পরিপন্থী। এটা ভীষন উদ্বেগের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, বরাবর ক্যাব যেভাবে ভোক্তাদের পাশে ছিল এবারও সেভাবেই ভোক্তাদের পাশে থেকে যা করা লাগে সেটাই করবে।

এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ডিজেল ও অকটেনের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়। ওই মূল্য বৃদ্ধির পর পরিবহন ব্যবসায়ীরা ৩ দিনের ধর্মঘট পালন করে। সেসময় মানুষ চরম দুর্ভোগে পরে। ওই পরিস্থিতিতে সরকার লঞ্চ, বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়ানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবারও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ

জ্বালানি তেল জ্বালানি তেলের দাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর