Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদেশ যেতে দালাল নয়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিন— যুবকদের প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুলাই ২০২২ ১৪:০৮

ফাইল ছবি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: দেশের যুব সমাজকে দালালদের প্ররোচনায় বিদেশে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে সবকিছু বিক্রি করে বিদেশে যাবেন না। বিদেশে যেতে গেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন, প্রয়োজন ক্ষেত্রে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা আছে, যাতে জমিজমা কিংবা সম্পত্তি বিক্রি না হয়।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে একইসঙ্গে চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে তাদের বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো উপজেলা পর্যায়ে এসব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে। এর আগে এসব উপজেলায় কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। যার কারণে বিদেশ গমনেচ্ছুদের আশপাশের জেলায় যেতে হতো।

বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের দেশে অর্থ পাঠানো যেন সুবিধা হয়, সেই সুবিধাটা যেন সহজভাবে হয় সেইভাবে সংশ্লিষ্ট সকলকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি অনেক জায়গায় তারা কাজ করে, কিন্তু সেখানে কোনো মানি এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংকের সুবিধা তারা পায় না যে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাবে। তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির উপর। এর উপর আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, কিছু এজেন্ট আছে তারা নানাভাবে মানুষকে উসকায়। ব্যাংকের মাধ্যমে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তাতে তাদের লাভ হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা কিন্তু এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখের কিছু উপরে। সেই ক্ষেত্রে আমি বলব আমাদের ৩৮ শতাংশ হচ্ছে যুব সমাজ। কাজেই আমাদের এই যুবশক্তিটা আমরা শুধু বিদেশে পাঠাবো এই চিন্তা করলে হবে না। আমরা দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানে আমাদের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন আছে। কাজেই আমরা প্রশিক্ষণ দেবো, তারা বিদেশে যেমন কাজ করবে আবার দেশেও তারা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় সেটা ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের বিশেষ করে টাকার ব্যাপারটা অর্থ্যাৎ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটু কম বেশি হবে। আমাদের কিছু লোক আছে এটা নিয়ে অনেক নানা ধরনের গল্প গুজব করে বেড়ায়। আমি মনে করি আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার যে রিজার্ভ সেটা থাকলেই যথেষ্ট।

‘তবে ভোগ্যপণ্য অর্থ্যাৎ খাদ্যপণ্য, এটার উপর আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নিজের দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের যে উর্বর জমি এবং জনসংখ্যা সেটা উদ্যোগ নিলে আমরা করতে পারি শুধু পণ্য উৎপাদন না সেই সঙ্গে পণ্য সংরক্ষণেও আধুনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই খাদ্যপণ্য বা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য শিল্প ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে। এতে নিজেরে দেশে যেমন মার্কেট তৈরি হবে আবার বিদেশেও যেন আমরা তা রফতানি করতে পারি’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল হলে হবে না, আমাদের পণ্য যেন বিদেশে রফতানি হয় সেজন্য পণ্য বহুমুখীকরণ করা এবং পণ্যের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন বাজারে কোন কোন পণ্যের কী কী চাহিদা আছে সেই ধরনের পণ্য বাংলাদেশে তৈরি করে পাঠাতে হবে। সেখান থেকে যেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। অ

দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করার জন্য পণ্য বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রেও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, পরনির্ভরশীলতা আমাদের কমাতে হবে। আমাদের নিজেরে পায়ে নিজেরা যেন দাঁড়াতে পারি সেই ব্যবস্থাটাই করতে হবে।

দক্ষ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই কাজের জন্য প্রয়োজনে আপনারা আপনাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয় থেকে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দিয়ে একটি কমিটি করে আপনারা স্ব উদ্যোগে কাজ করবেন তাহলে সব কাজগুলি সহজ হয়ে যাবে। যাতে আমাদের কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক শ্রেণির দালাল আছে সারা বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে তারা আমাদের বিভিন্ন কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে। বিভিণন্ন পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করে বাইরে পাঠালে এতো টাকা হবে, এই হবে সেই হবে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায়। আর সেটা দেখতে যেয়ে জমিজমা বিক্রি করে একটা অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা করে তখন পড়ে বিপদে। সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকেই তাদের উদ্ধার করতে হয় অথবা ওই ভুমধ্যসাগরে নিজেদের সলিল সমাধি হয়, এটা হচ্ছে দুভার্গ্যজনক।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এইভাবে কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে সবকিছু বিক্রি করে বিদেশে যাবেন না। বিদেশে যেতে গেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন, প্রয়োজনক্ষেত্রে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা আছে, যেন জমিজমা বিক্রি না হয়। সম্পত্তি বিক্রি না হয়। তার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকটা তৈরি করা, কাজেই সেই ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আপনারা বিদেশে যেতে পারেন। নিজে কাজ করে এই ঋণও শোধ দিতে পারেন, নিজেরে পরিবারকে দেখেতে পারেন।
কাজেই দয়া করে এই ধরনের আর কোনো প্ররোচনায় পড়বেন না।

তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। আমাদের শিক্ষাটা একটা দক্ষ জনশক্তিমূলক শিক্ষাই হবে। আর তাছাড়া আমরা এখন টিটিসি প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছি যার ফলে আমাদের আরও ভাল প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। আর যারা প্রশিক্ষণ নেবে তারা যেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নেয় সেইদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সরকারের সাড়ে ১৩ বছরে আমরা ৫৫টি দেশে নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি । কিন্তু বিএনপি জোট সরকারের আমল ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ব্যাপকভাবে শ্রমবাজার কমে আসে। মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি অনিয়ম সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমিকদের হয়রানি করা হয়েছিল এবং এই সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি বন্ধ করে আমাদের সরকার বিদেশগামী শ্রমিকদের হয়রানিটা লাঘব করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি ঘটতে চলেছে এবং আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যুগে প্রবেশ করছি। কাজেই আমাদের দেশকে সমানতালে দ্রুত গতিধারায় এগিয়ে নিতে হলে উন্নত টেকসই প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আমাদের সবসময় নিজেদের মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে, বিদেশে আমরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি। আমরা স্বাধীন জাতি আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি সেই কথাটা সকলকে মাথায় রেখে চলতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহিদুল আলম এনডিসি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ মনিরুছ সালেহীন।

সারাবাংলা/এনআর/এসএসএ

প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর