Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বডি পজিটিভিটির প্রচারণায় স্প্যানিশ সরকার

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুলাই ২০২২ ১৫:৪১

একটা সময় ছিল যখন বিশেষ ওজন ও গড়নের নারী শরীরকেই শুধুমাত্র আদর্শ সৌন্দর্য হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাচ্ছে সেই চিন্তা। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এভরিবডি বিউটিফুল’ বা ‘সব ধরনের শারীরিক কাঠামোই সুন্দর’ প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের নামিদামী ফ্যাশন-শোতেও শুধু ছিপছিপে নয়, নানারকম শারিরীক কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যের নারী মডেল দেখা যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার বডি পজিটিভিটির প্রচারণায় যুক্ত হলো স্প্যানিশ সরকারের নাম। সম্প্রতি সবধরনের শারীরিক কাঠামোর নারীই সাগরতীরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এমন এক প্রচারণা শুরু করেছে তারা। স্পেনের সমতা মন্ত্রণালয় এই গ্রীষ্মে ‘সব নারীর জন্য সাগরতীর’ প্রচারণার মাধ্যমে সব ধরনের শারীরিক কাঠামোর নারীকে সাগরতীরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

ইউরোপসহ বিশ্বের নানা দেশে সাগরতীরে বিকিনি, মনোকিনি বা অন্যান্য সাঁতারের পোশাক পরার চল আছে। কিন্তু এসব পোশাকে যেহেতু শরীর অনাবৃত থাকে তাই অনেক মেয়েরাই গ্রীষ্মে সাগরতীরে যেতে ভরসা করতে পারেন না। বিশেষ করে যারা তথাকথিত ‘মডেল বডি’র অধিকারী নন, তারা সাঁতারের পোশাক পরতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। এর পেছনে যতটা না ব্যক্তির নিজের শরীর নিয়ে অস্বস্তি থাকে, তার চেয়েও বেশি থাকে অন্যদের চোখে বিচার হওয়ার ভয়। কারণ মেইনস্ট্রিম মিডিয়া একসময় শুধুমাত্র নির্মেদ ছিপছিপে শরীরকেই আদর্শ হিসেবে প্রচার করত। ফ্যাশন শোয়ের রানওয়েতেও এমন ছেলে-মেয়েরাই জায়গা পেত।

স্পেনের সমতা মন্ত্রণালয় এই ভয় দূর করে সব নারীই যেন সাগরতীরে উপভোগ করতে যায় সেই প্রচারণা চালাতে নানা ধরনের কার্যক্রম শুরু করেছে। পাঁচ ভিন্ন রকমের শারীরিক কাঠামোর নারীর ছবিতে ‘সামার ইজ আওয়ারস টু’ অর্থাৎ ‘গ্রীষ্ম আমাদেরও’ স্লোগান চালু করেছে তারা। প্রচারণার উদ্দেশ্যে সোশ্যাল সার্ভিসেস মন্ত্রী লোন বেলারা বলেন, ‘অল বডিজ আর বিচ বডিস’ অর্থাৎ সব ধরনের শরীরই সাগরতীরে যাওয়ার উপযুক্ত।

প্রচারণা সম্পর্কে উইমেন্স ইনস্টিটিউট প্রধান অ্যান্টোনিয়া মোরিলাস বলেন, নির্দিষ্ট শারীরিক কাঠামোতে দেখার চিন্তা শুধু নারীর আত্মমর্যাদাতেই আঘাত করে না, তাদের অধিকারও লঙ্ঘন করছে।
এই ক্যাম্পেইনের স্লোগান সম্বলিত ছবিতে পাঁচ নারীর একজনকে টপলেস অর্থাৎ শরীরের ঊর্ধ্বাংশে পোশাক ছাড়া দেখা যাচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য হলো তার একটি স্তন অপসারণ করা। স্তন ক্যান্সারসহ নানা কারণে নারীর একটি বা উভয় স্তন অপসারণ করা হতে পারে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে স্তনকে নারীর সৌন্দর্য হিসেবে দেখা হয়েছে যার ফলে কোনো নারীর নির্দিষ্ট আকৃতির স্তন না থাকলে বা কোনো কারণে অপসারণ করলে তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে যেতে দেখা গেছে এসব সামাজিক ট্যাবুর কারণে। স্পেন সরকারের এই ক্যাম্পেইনে মাসটেকটমি অর্থাৎ স্তন অপসারণের চিহ্নসহ নারীর ছবি দেওয়ার মাধ্যমে সেই ট্যাবু ভাঙার চেষ্টা উঠে এসেছে। স্পেনের উইমেন্স ইনস্টিটিউটের বক্তব্যেও এটিই উঠে এসেছে। তাদের মতে, নারীরা গ্রীষ্ম উপভোগ করবে যেখানে ইচ্ছা এবং যার সঙ্গে ইচ্ছা। বিজ্ঞাপনটির ভাষ্যমতে, ‘আজ আমরা আমাদের শরীরের বিরুদ্ধে স্টেরিওটাইপ এবং নান্দনিক সহিংসতা ছাড়াই সবার জন্য সুন্দর এক গ্রীষ্ম কামনা করি।’

কিন্তু সবাই যে এই প্রচারণাকে খুব সহজভাবে নিয়েছে তা না। কেউ কেউ বলছেন, এই প্রচারণায় পুরুষদেরও অংশ করা যেতো কি না। অন্যদিকে অনেক রাজনীতিবিদ মনে করছেন স্পেনে এমন কোনো সমস্যাই নেই। তাই এ ধরনের প্রচারণাও অপ্রয়োজনীয়। বামপন্থী নেতা কায়ো লারা বলেন, প্রচারণাটি উচ্চমাত্রার অযৌক্তিক, কারণ এখানে এমন একটি সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করছে যেখানে এটি বিদ্যমান নেই।

জুনিয়র সমতা মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রদ্রিগেজ পাম টুইটারে এমন পুরুষদের জন্য একটি বার্তা পোস্ট করেছেন যারা বিশ্বাস করেন যে নারীদের সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন নেই। তার মতে স্ট্যান্ডার্ড না এমন শরীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর মাধ্যমে না উল্টো ঘৃণা ছড়ানো হয়। তার টুইটারের বক্তব্য, ‘অবশ্যই আমরা যাই (সাগরতীরে), কিন্তু আমরা ধরে নিচ্ছি যে আমরা এমন একটি শরীর দেখানোর জন্য ঘৃণা ডেকে আনবে যেটি আদর্শ না।’

সূত্র: বিবিসি

সারাবাংলা/আরএফ/এসএসএ

টপ নিউজ বডি পজিটিভিটি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর