জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার
২৮ জুলাই ২০২২ ১৬:১৫
ঢাকা: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, দেশের বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বাস্তবায়নাধীন বর্তমান প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত উদ্ভিদ জরিপে পাওয়া ফলাফল দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা, উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্তকরণ ও তাদের সুরক্ষা এবং জাতীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে এবং এসডিজি অভীষ্ট অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করছেন পরিবেশ মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম মিরপুরে অনুষ্ঠিত বরিশাল এবং সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ প্রজাতি জরিপ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালায় সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জরিপের এসব তথ্য জৈবিক বৈচিত্র্যের কনভেনশন; বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কনভেনশন এবং জলাভূমিতে রামসার কনভেনশনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।
উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে গবেষণাকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, দেশের সকল বাস্তুতন্ত্রের উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের উদ্ভিদ প্রজাতির সঠিক পরিসংখ্যান জানা প্রয়োজন এবং কেবলমাত্র একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ জরিপের মাধ্যমেই দেশের উদ্ভিদ সম্পদের হালনাগাদ পরিসংখ্যান, অবস্থান এবং সংরক্ষণ অবস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব।
তিনি বলেন, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য বিবেচনায় বরিশাল একটি সদা পরিবর্তনশীল এবং ক্রমক্ষয়িষ্ণু বিভাগ। এ বিভাগের উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা এক হাজারের বেশি বলে ধারণা করা হয়। অপরদিকে সিলেট বিভাগে উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের প্রাচুর্য সৃষ্টির পক্ষে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা দেড় হাজারের অধিক বলে জানা যায়। তবে সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের কোনো পূর্ণাঙ্গ জরিপ এখনো শেষ করা হয়নি। তাই এ প্রকল্পে বরিশাল এবং সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ সম্পদের প্রকৃত অবস্থা নিরুপণ, বৈচিত্র্য নথিবদ্ধকরণ, সংরক্ষণ ও সুষম ব্যবহারের জন্য মাঠপর্যায়ে বিজ্ঞান সম্মত জরিপের মাধ্যমে প্রায় ৭০ হাজার উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে তথ্য সম্বলিত ২টি পুস্তক প্রণয়ন করা হবে এবং সকল তথ্য ই-ডাটাবেজ প্রস্তুত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে বিএনএইচ ‘সার্ভে অব ভাস্কুলার ফ্লোরা অব চিটাগাং অ্যান্ড দ্য চিটাগাং হিল ট্রাক্টস’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাস্কুলার উদ্ভিদ প্রজাতিসমূহের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান, ফ্লোরিস্টিক দলিল রচনা এবং নমুনা সংরক্ষণের কাজটি সম্পন্ন করেছে এবং টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতির লাল তালিকা প্রণয়ন এবং পাঁচটি নির্বাচিত রক্ষিত এলাকার ভিনদেশি আগ্রাসী উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণের কৌশলপত্র উদ্ভাবনের কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যা দেশের উদ্ভিদ সম্পর্কিত তথ্যের অপ্রতুলতা দূর করে, উদ্ভিদ তথা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী এবং এসভিএফবিএস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. সরদার নাসির উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে আসা অধ্যাপকরা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা গবেষকরা, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর/সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ