নড়াইলের সাম্প্রদায়িক হামলায় আ.লীগের গ্রুপিং দায়ী: বিএনপি
২৮ জুলাই ২০২২ ১৬:৩৫
ঢাকা: নড়াইলের দিঘলিয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকান পাট-মন্দির ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করে আসা বিএনপির তদন্ত টিমের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত টিম সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ঘটনাটি নিশ্চিতরূপে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যেই সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। যেটা অন্যান্যা জায়গার মতো নড়াইলেও ঘটেছে।’
তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘১৫ তারিখ হঠাৎ করে মাগরিবের নামাজের পরে প্রায় দুই-তিন‘শ লোক সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে সাহাপাড়াতে প্রবেশ করে। সেখানে ১০/১২টি বাড়ি ঘর ভেঙে তছনচ করে এবং ঘর-বাড়ি ও মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, প্রতিমা ভাঙে।’
‘ওই গ্রামের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের । যখন বাড়ি-ঘর ভাংচুর হচ্ছে, দরজা ভেঙে ফেলছে, বাড়িতে আগুন দিচ্ছে তখন এরা (আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান) নির্বিকার। কারণ, যে চেয়ারম্যান হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর পাশের গ্রামের আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী, সে পরাজিত হয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। এখন দ্বন্দ্বটা শুরু হয় বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী পাস করল কিভাবে? দিঘলিয়া গ্রামের ৭০% ভোট হিন্দু ভোট। হিন্দুরা ভোট দিয়েছে সেই প্রার্থীকে। কেন দিল ভোট? এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।’
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নড়াইলের এই ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী। প্রতিবেদনে তা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই যারা সংখ্যায় কম সেই সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন-হামলা-লুটপাট-ভাংচুরের ঘটনাগুলো বেড়েছে। এবং তাদের সম্পত্তির বেশির ভাগ মালিক কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, ঘন ঘন এই ঘটনাগুলো ঘটছে অর্থাৎ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যে অধিকার সেই অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে তাদের গৃহ থেকে, জমি থেকে উচ্ছেদ করে, দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ দখল করা তাদের (আওয়ামী লীগ) প্রধান লক্ষ্য হয়ে আছে।’
ঠাকুরগাঁও এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমার নিজের নির্বাচনি এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদয়ের মানুষ প্রচুর। তাদের মধ্যে একজন আমার ছাত্র ছিল। নাম ছিল অমর রায়। সে খুব চমৎকার একটা কথা বলতো বক্তৃতা দেওয়ার সময়, ‘হামরা হচ্ছি বিহার দিনের পাগরি। মানে দুই-এক দিনের পাগরি হচ্ছি আমরা। ওই নির্বাচনের দিন পাগড়ি পরা হয়, আর কখনো হয় না। ওই পাগড়ি পরে নৌকাকে ভোট দিতে হয়।”
‘এখানে আওয়ামী লীগ মনে করে যে, তারা (সংখ্যালঘু) তাদের লোক, তারা তাদের সম্পত্তি, তারাই তাদের রক্ষক। তাদের ভোট-টোট যা কিছু আছে, আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। যা কিছু অত্যাচার-নির্যাতন, তাদের সম্পদ লুট করা, তারাই করবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস অপু ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) কে কটুক্তি করে পোস্ট দেওয়া নিয়ে গত ১৫ জুলাই সকালে নড়াইলের দিঘলিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা তদন্তের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে বিএনপি। গত ২৩ জুলাই তদন্ত টিম নড়াইলের দিঘলিয়া সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম