রফতানি আদেশ কমছে, শঙ্কায় পোশাক খাত
২৮ জুলাই ২০২২ ২২:৪৫
ঢাকা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে পোশাক পণ্যের রফতানি আদেশ কমছে। এরই মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রফতানি আদেশ (অর্ডার) কমেছে বলে জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। ফলে নতুন অর্থবছরে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। শুধু তাই নয়, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে দেশের রফতানিমুখী পোশাক শিল্প খাত— এমনই দাবি এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।
এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মহামারিতে আমরা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত (অ্যাফেক্টেড) হয়েছি, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে। বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদা কমেছে। সব ধরনের প্রাথমিক উপকরণের দাম বেড়েছে। ফলে চূড়ান্ত পণ্যের (ফিনিশড প্রোডাক্ট) দাম বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা আগের দামেই পণ্য কিনতে চাচ্ছে। কারণ আমাদের প্রতিযোগী অনেক দেশকেই প্রাথমিক উপকরণ আমদানি করতে হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে দেশে পণ্য উৎপাদনের খরচ কমাতে হচ্ছে। আমাদের অটোমেশনে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, পোশাকের ক্রয়াদেশ একেবারেই কমে যাবে, তা নয়। কিছুটা হয়তো কমবে। তবে তাতে আমাদের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে দেশের রফতানিমুখী পোশাক শিল্প খাত।
দেশের নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী মানুষের আয় কিন্তু সীমিত। যেহেতু মানুষকে নির্দিষ্ট আয়ে চলতে হয়, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যে বেশি টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় মানুষ এখন পোশাক পণ্য কম কিনছে। ফলে বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদা কমেছে।
তিনি বলেন, আমাদের রফতানিতে পোশাকের পরিমাণ (কোয়ানটিটি) কমে যাচ্ছে। এ কারণেই অর্ডার কমছে। আবার বিশ্ববাজারে তুলার দাম কমেছে। এ কারণে পোশাকের নেট প্রাইস কমে গেছে। এ কারণে টাকার অঙ্কেও রফতানি কমছে। পোশাকের অর্ডার কম ও নেট প্রাইস কম হওয়ায় আমাদের রফতানি আয়ও কমছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। জ্বালানি থেকে থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম উর্ধ্বমুখী। মূল্যস্ফীতির কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ক্রেতারা (বায়ার) কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় যে প্রাইসটা বাড়ার কথা, ক্রেতারা সেটি ভোক্তাদের ওপর চাপাচ্ছে না। বরং তারা দাম কমাতে চায়। আমরা পূর্বাভাস পাচ্ছি, আমাদের অর্ডার কমছে। করোনা পরবর্তী সময়ে যে প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়ছিল, সেটি এখন কমতে শুরু করেছে। আবার একটু ধীরগতির (স্লো ডাউন) দিকে যাচ্ছে।
সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী মৌসুমের ক্রয়াদেশ পাওয়ার মাধ্যমে চলমান সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে— এমন আশাবাদ অবশ্য জানাচ্ছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর এমনিতেই স্লো যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্র্যান্ডগুলোর ইনভেনটরি বেড়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্ডার কমে যাচ্ছে। আবার কিছু অর্ডার অন্য দেশেও শিফট হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি— আগামী মাস থেকে অর্ডার বাড়তে শুরু করবে। সেপ্টেম্বরে আমরা নেক্সট সিজনের অর্ডার পাব। যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেটি আপৎকালীন সমস্যা। এটি দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। কারণ করোনাকালীন আমরা ক্রেতাদের যেভাবে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য সরবরাহ করেছি, তারা আমাদের কাছ থেকেই পণ্য কিনবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
আতঙ্কিত না হওয়ার প্রত্যাশার কথা জানালেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেনও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সারাবিশ্বেই মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। এর অর্থ, মানুষ কাপড় পরবে না, তা নয়। বড় বড় ব্র্যান্ড বা শপগুলো আগে যতটা কেনাকাটা করত, এখন তার চেয়ে কম করবে। তবে যেভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ক্রয়াদেশ সেই পরিমাণে কমবে না।
তিনি বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি— ১০ থেকে ১৩ শতাংশ অর্ডার কমে যেতে পারে। মুদ্রাস্ফীতিও তো এখন ৬ থেকে ৮ শতাংশ। ফলে ক্রয়াদেশ যে কমবে, সেটি স্বাভাবিক। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হবে না বলেই প্রত্যাশা করছি।
মার্চ-জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বর-নভেম্বর সময়ের জন্য ২০ শতাংশ কম ক্রয়াদেশ এসেছে জানিয়ে পোশাক কারখানার মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক খুচরা পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্ডার দিয়েছিল, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তার চেয়ে ২০ শতাংশ কম অর্ডার দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্যাসের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। জ্বালানি ও খাদ্যে খরচ বাড়ায় বাংলাদেশের মতো তৈরি পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসন্ন বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) কমেছে ২০ শতাংশের মতো।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর