Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণতন্ত্র ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুলাই ২০২২ ০০:১২

ঢাকা: আইনের শাসন ফেল করলে ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) ফেল করবে, আর ডেমোক্রেসি ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ইদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আইন পেশার সুমহান মর্যাদা রক্ষা করতে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে বার (আইনজীবী) ও বেঞ্চ (বিচারক)কে সোচ্চার থাকতে হবে। আইনজীবীদের প্রতি একান্ত প্রত্যাশা থাকবে যে, আদালতের পবিত্র অঙ্গন থেকে অসাধু ও প্রতারক চক্রকে উচ্ছেদের মাধ্যমে এই অঙ্গনকে কলুষ মুক্ত করবেন।’

আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘খেটে খাওয়া সর্বস্ব হারানো মানুষকে আইনের সেবা প্রদানের সুযোগ আপনাদেরই করে দিতে হবে। জীবন যুদ্ধে ক্লিষ্ট মানুষগুলোর জায়গায় একবার নিজেকে ভাবুন, মুহূর্তে তাদের কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে যাবেন। বিচার প্রত্যাশী জনগণের হয়রানি নিরসনে আপনাদের হৃদয় নিংড়ানো আন্তরিকতা খোদার কাছে ইবাদতের মর্যাদা পাবে।’

এ সময় হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ফেল করলে আইনের শাসন ফেল করবে। আইনের শাসন ফেল করলে ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) ফেল করবে। ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা আমাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবো।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নানা কারণে বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে। আমাদের সচেতনতা, কর্মনিষ্ঠায় মামলা জট হ্রাস মেলে, হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ন্যায় বিচার পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে।

বিজ্ঞাপন

হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, বেঞ্চ গঠন করতে গেলে আমাকে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। করোনার সময় অনেক বিচারপতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেঞ্চ গঠনের বেগ পেতে হয়েছে। আশা করি আমরা কিছু দিনের ভেতরেই নতুন বিচারক পাবো। তখন হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যেভাবে বেঞ্চ গঠন করলে ভালো হয়, সেটাই আমি করার চেষ্টা করি।

প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের বসার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, আইনজীবীদের জায়গা সংকটের পাশাপাশি আমি মনে করি যারা গ্রামগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষ বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে আসে, তাদেরও বসার জায়গা করা দরকার। এজন্য আমি যখন শপথ নিই, তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার প্রার্থীদের জন্য সব আদালত এলাকায় বসার জায়গা করার জন্য শেড নির্মাণের অনুরোধ করি। তিনি তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে যান।

তিনি বলেন, এখন কথা হলো টাকা তো আমার হাতে থাকে না। আলাদিনের চেরাগ পেলে আমি সাথে সাথে আপনাদের দাবি পূরণ করে দিতাম।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, তারপরও কথা হলো আমাদের প্রধান সমস্যা হলো জায়গার। আমাদের এখন যতটুকু জায়গা আছে তার মধ্যে আগামী ১০০ বছরের প্ল্যান করতে হবে। প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের মাস্টার প্ল্যান করে আগাতে হবে।

আইনজীবীদের ভবন নির্মাণের দাবির বিষয়ে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আপনাদের দুঃখ, কষ্ট আমি বুঝি। এজন্য আপনাদের জন্য যতটুকু আমার করার আছে সেটুকু আমি করবো।

ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. এহিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শামছুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা এম. আমির-উল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার, বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সারোয়ার জাহান বাদশা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সমিতির সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ইমাম হোসেন, সাবেক কোষাধ্যক্ষ রাগিব রউফ চৌধুরী প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একেএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর