সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপে বাড়ছে অবকাঠামো সুবিধা
২৯ জুলাই ২০২২ ০৮:২৭
ঢাকা: সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯১৩ কোটি ৭০ লাখ টাাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের সুষ্ঠু ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতকরণ এবং নৌ-পর্যটন সুবিধাসহ আধুনিক ল্যান্ডিং সুবিধা দেওয়া এবং প্রকল্প এলাকার ক্রমবর্ধমান বাল্ক কার্গো ও পণ্য মালামাল লোডিং আনলোডিংয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা । ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বিআইডব্লিউটিএ।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম এলাকার মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা, কক্সবাজার এলাকা সোনাদিয় ও টেকনাফ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়া হলে পরিবহন মাধ্যমে দেশের অবদান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য ব্রুরো অব রির্সাচ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসুলেশন (বিআরটিসি), বুয়েট সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য নিম্নোক্ত জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
মিরসরাই: মিরসরাই দেশের জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজা ৩০ হাজার একর জমির ওপর এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব দিকে অবস্থিত, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব ম্যানগ্রোভ বন ও জলাভূমি এবং দক্ষিণে ফেনী নদী অবস্থিত। এলাকাটিতে প্রবেশের জন্য সিডিএসপি ও বাউবো নির্মিত দুটি সড়ক বাঁধ ব্যবহার হয়। এ দুটো বাঁধ দুটি সড়ক দ্বারা সংযুক্ত, উত্তর দিকে প্রকল্প রোড এবং দক্ষিণ দিকে আবু তোরার বেড়ি বাঁধ রোড। এই এলাকাটিতে সহজে প্রবেশ করার জন্য আবু তোরাব জংশনের বিদ্যমান বাঁধ থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত ৫ মিটার প্রস্থ এবং ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর একটি প্রবেশ পথ নির্মাণ করা হবে। জোয়ার এবং বর্ষাকালে পানি যাতে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য উত্তর ছাড়া প্রস্তাবিত এলাকার সীমানা বরাবর একটি বাঁধ সুপার ডাইক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। উত্তর দিক এর মধ্যে বিদ্যমান সিডিএসপি বাঁধ দ্বারা সুরক্ষিত বাঁধের মোট দৈর্ঘ্যে ৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার।
সন্দ্বীপ: চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ প্রায় ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। সন্দ্বীপের পূর্ব উপকূল বরাবর তিনটি ফেরিঘাট রয়েছে, সেগুলো হলো- মাঝিরহাটঘাট, সন্দ্বীপ পূর্ব এবং গুপ্তছড়া ফেরিঘাট। মীরসরাইতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে অনেক শ্রমিক সন্দ্বীপে বসবাস করবে ও এই দ্বীপ হতে কর্মস্থলে যাতায়াত করবে। এ কারণে উপকূল ও সমুদ্রবর্তী দ্বীপগুলো উঠানামার জন্য উন্নত ল্যান্ডিং সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
সোনাদিয়া: কক্সবাজাার থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সোনাদিয়া দ্বীপ প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। সোনাদিয়া দ্বীপ শুটকি মাছের জন্য বিখ্যাত। সম্ভাব্য পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য জেটিসহ ল্যান্ডিং সুবিধাদিও উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাবরাং ট্যুরিজম: কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় ১ হাজার ২৭ একর এলাকা জুড়ে তৈরি প্রস্তাবিত সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক কক্সবাজার জেলার প্রথম সম্পূর্ণ পর্যটন পার্ক হবে। পার্কটি এ সৈকতের সামনে অবস্থিত এবং এটি থেকে সাগর পথে প্রবাল দ্বীপ, সেন্টমার্টিন যেতে মাত্র আধ ঘণ্টা সময় লাগবে। এ কারণে এখানে যাতায়াতের জন্য জেটিসহ ল্যান্ডিং সুবিধাও উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নাফ নদীর তীরে জালিয়ার দ্বীপে জেটি: নাফ নদীর মাঝখানে ছোট্ট একটি দ্বীপ জালিয়ার দ্বীপ। টেকনাফ উপজেলার হৃীলা ইউনিয়নে অবস্থিত জালিয়ার দ্বীপে কোনো লোক বসতি নেই। ২৭১ দশমিক ৯৩ একর জমিতে নাফ ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। পার্কটিতে পর্যটনের সকল আধুনিক সুবিধা থাকবে।। এখানে যাতায়াতের জন্য জেটিসহ ল্যান্ডিং সুবিধা নির্মাণ প্রয়োজন।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ২৫ দশমিক ৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৩ দশমিক ৯৫ লাখ ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন, ২৩ হাজার ৪৮৮ বর্গমিটার বন্দর ভবন, ২৩ হাজার ৪৮৮ বর্গমিটার ইনডোর নন স্ট্রাকচারাল ফিনিশিং, ৭৫ হাজার ৪৮০ দশমিক ৬০ বর্গবর্গমিটার আরসিসি জেটি, ৩ হাজার ৮৩০ বর্গমিটার বাউন্ডারি ওয়াল, ৮ হাজার ৪৮৫ বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৪টি নৌ সহায়ক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঅঞ্চলে কক্সবাজার, টেকনাফ, কতুবদিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আশেপাশের জেলাগুলোর লোকজনের মালামাল পরিবহন ও যাতায়াত খরচ কমবে এবং সময় বাঁচবে। এছাড়া প্রস্তাবিত বন্দর এলাকায় পরিবাহিত মালামাল সুষ্ঠু ও নিরাপদ উঠা নামা নিশ্চিত হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস