‘দেশের রিজার্ভ ১৬ বিলিয়নের বেশি নয়’

ঢাকা: বর্তমানে দেশে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় বিএনপির তিন দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশে এখন রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার। এই ৩১ বিলিয়ন ডলারও পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য নয়। এখানে ৮/৯ বিলিয়ন ডলার আছে সোনা। শুধু ব্যবহার করা যায় এর পরিমাণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ১৬ বিলিয়নের বেশি নয়।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী (আহম মুস্তফা কামাল) বললেন যে, আমরা আইএমএফ থেকে টাকা ধার নেব না। কালকে আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, তারা সাড়ে চার‘শ বিলিয়ন ডলার ধার চেয়েছে আইএমএফের কাছে। এই সরকার মুখে বড় বড় কথা বলে, অনর্গল মিথ্যা কথা বলে, মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা শূণ্য হয়ে গেছে। মানে বাংলাদেশকে তারা ফোকলা দেশে পরিণত করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সুতরাং এদেরকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না, আর কোনো সময় দেওয়া যাবে না। যত বেশি সময় এরা থাকবে, বাংলাদেশকে ধ্বংস করে ফেলবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকালই তিনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোনো ঘাটতি নেই। আমার প্রশ্ন ঘাটতি নেই তো লোডশেডিং কেন? কেন আপনারা জ্বালানি লোডশেডিং রেশন করছেন, গ্যাস রেশন করছেন, কেন আজকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন অশনি সংকেত?’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি করে, চুরি করে তারা (সরকার) বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সর্বনাশ করে দিয়েছে। আজকে শহরে দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ যায় আর গ্রামে ৭/৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এই সরকার বিদ্যুৎ খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে এবং বিদেশে পাঠিয়েছে।’

সমাবেশে আসা নারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পুলিশের গুলিতে ছয় মাসের শিশু সুরাইয়ার মাথার খুলি উড়ে গেছে। পত্রিকা খুললে দেখবেন, প্রতিদিন হাজারো মানুষ হয় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে অথবা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে মারা যাচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের শালীনতা হানি করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। সমগ্র দেশে আজকে একটা হাহাকার পড়ে গেছে।’

এর ওপরে ‘মরার খাঁড়ার ঘা’ বিদ্যুৎ নাই। আমাদের মা-বোনেরা এখানে হারিকেন নিয়ে এসেছেন। এই হারিকেনটা গণভবনে শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেন। তার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন। শুধু এই মিটিংয়ের মধ্যে হারিকেন আনলে হবে না। যখনই অন্ধকার আসবে, যখন লোডশেডিং শুরু হবে আপনারা মোমবাতি ও হারিকেন নিয়ে বেরুবেন। এই মোমবাতি-হারিকেন নিয়ে না বেরুলে আমরা আলোচিত হব না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমরা আর আওয়ামী লীগকে সময় দেব? আজকে তাদের পতন ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আজকে বিদ্যুৎ, এর পরে জ্বালানি তেল, এরপরে দেখবেন খাজানচি খানা শূণ্য হচ্ছে, রিজার্ভ শূন্য হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন একটাই দফা, এক দাবি— সরকারের পদত্যাগ।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আর সময় নেই, এখন জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী ভয়ঙ্কর দুর্নীতিবাজ সরকারকে একটা ধাক্কা লাগাতে হবে। সেই বিখ্যাত উক্তি, দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।’

বিদ্যুৎ খাতের লোকসানের খতিয়ান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২১-২২ সালে বিদ্যুৎ খাতে লোকশান হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এমনি প্রত্যেক বছরে সব মিলিয়ে লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে না, বিদ্যুত দেয় না কিন্তু ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের টাকা নিয়ে চলে যায়। কারা এই টাকাগুলো নিয়েছে জানেন?’

‘সামিট গ্রুপ নিয়েছে ৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল ৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, এরদা পাওয়ার হোল্ডিং ৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ ৪ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, কেপিসিএল ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এই রকম ১০টা কোম্পানি যারা এই আওয়ামী লীগের সঙ্গে, মন্ত্রীদের সঙ্গে, হাসিনার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত তারা এই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে নিয়ে চলে যাচ্ছে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, তাবিথ আউয়াল, সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক মোস্তা্ফজিুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের সাইফ মাহুমদ জুয়েলসহ অনেকে।

সারাবাংলা/এজেড/এমও

১৬ বিলিয়ন টপ নিউজ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রিজার্ভ