Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মন্ত্রণালয়ে ‘আটকা’ বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ জুলাই ২০২২ ০৯:৪৮

রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য ৩৩ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও শুরু হয়নি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ও স্টেশনের কোনো কার্যক্রম। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে অধিগ্রহণ করা ভূমি। মন্ত্রণালয়ের দফতরে ফাইল আটকে থাকায় কাজ গতি পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলায় ফায়ার স্টেশনের অভাবে গত দুইবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা প্রকল্প কার্যালয়সহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও মানুষের ঘরবাড়ি পুড়েছে চোখের সামনে। অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থার অভাবে নিঃস্ব হতে হয়েছে অনেক পরিবার ও ব্যবসায়ীকে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্ত বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়িতে রয়েছে একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন। এই উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এই উপজেলার নৌপথে দূরুত্ব ১৪৪ কিলোমিটার আর খাগড়াছড়ি হয়ে সড়ক পথে ১৪৬ দূরুত্ব কিলোমিটার। গত প্রায় তিন বছর আগে ফায়ার স্টেশনের জন্য উপজেলা সদরের পৌর এলাকার হাজীপাড়ায় ৩৩ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করা হলেও স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি এখনও। বর্তমানে অধিগ্রহণকৃত ভূমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

তাই উপজেলার কোথাও আগুন লাগলে আগুন নেভাতে হয় এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের। পাশের খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে বাঘাইছড়ির দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার হলেও বেহাল সড়কের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক।

উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ বাজার হলো দূরছড়িবাজার। এ বাজারে ২০২১ ও ২২ সালে দুই দফায় ১০২টি দোকান ও বসতঘর পুড়েছে, বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এখানকার মানুষ। এরমধ্যে গত ২১ জুলাই আগুনে ৬৯টি দোকান, গোডাউন ও ঘর এবং ২০২১ সালের ২৪ মে ১২টি দোকান ও ২১টি বসতঘর পুড়েছে ফায়ার স্টেশনের অভাবে। এভাবেই একবারের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই নিঃস্ব হচ্ছেন তারা।

দূরছড়ি বাজারের বাসিন্দা মো. রফিক জানান, আগুন লাগলে আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন কাজ হয় না। এতে এক এক করে আমরা আগুনে সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হই। পাশের দীঘিনালা উপজেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিস আসতে সময় লাগে কমপক্ষে ঘণ্টাখানেক। এটি শুধু দূরছড়ি বাজারের চিত্র নয়, উপজেলা সদর এবং আশপাশে বিভিন্ন সময় আগুন লাগলেই একমাত্র ভরসা দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৪ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প কার্যালয়টি পুড়ে ছাই হয়ে যায়, পুড়ে যায় সব নথি। ওইসময় দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস এসে যদিও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর একই বছরের ২৯ মে বঙ্গলতলী ইউনিয়নে বসতঘর পুড়ে নিঃস্ব হন ভাগ্যধন চাকমা। কিন্তু বছর পেরুলেও সেই ভাগ্যধনের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, হয়নি কাঙ্ক্ষিত ফায়ার স্টেশন স্থাপন।

উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, বাঘাইছড়ি সদরে ফায়ার স্টেশনের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ হলেও এখনও সেখানে স্টেশন স্থাপন হয়নি। যার কারণে আগুন লাগলে তা সহজে নিভানো যায় না। পাশ্ববর্তী খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস আসতে একঘন্টার বেশি সময় লাগে। কিন্তু যদি বাঘাইছড়ি সদরে ফায়ার স্টেশন হতো তাহলে সেটি দূরছড়ি বাজারে আসতে সময় লাগতো ১৫ মিনিটের মত। এতে আমাদের আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে যেত।

বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, ইতোমধ্যে ফায়ার স্টেশনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এখন বাকি স্টেশনটি নির্মাণ কাজ। আমাদের ইউএনও ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সব পর্যায়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনভাবেই এটা হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখের বিষয়, যেখানে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জরুরি হওয়া প্রয়োজন, সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এখানে দ্রুত ফায়ার স্টেশন স্থাপন প্রয়োজন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তার জানান, ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে আবারও পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েকবছর আগে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশনের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য আর একটি প্রকল্প স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলে তা গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।

গণপূর্ত বিভাগ রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল জানান, সারাদেশে ১৫৬টি ফায়ার স্টেশনের কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও লংগদু উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রম চলমান। যতটুকু জেনেছি সামনের প্রকল্পে বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশন তালিকায় রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো চিঠি বা অর্ডার আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমি উপস্থাপন করেছি, এটি সরকারের বিবেচনায় আছে। আশা করছি দ্রুত হয়ে যাবে, সামনে আবারও লিখব।’

সারাবাংলা/এমও

টপ নিউজ নির্মাণ কাজ ফায়ার স্টেশন বাঘাইছড়ি মন্ত্রণালয়ে আটকা রাঙ্গামাটি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর