চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জনের নিহতের ঘটনায় গ্রেফতার রেলের গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শনিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে সাদ্দামকে আদালতে হাজির করা হলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার পরিদর্শক জাকির হোসেন মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মীরসরাইয়ে দুর্ঘটনার পর দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাদ্দামকে আদালতে হাজির করেছিল রেল পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের কোনো আবেদন করা হয়নি। আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত সেটা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
গতকাল শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে মীরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে রেললাইনে উঠে পড়া একটি মাইক্রোবাসকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মাইক্রোবাসের এক আরোহী অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হন।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাদ্দামকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৩৮ (ক), ৩০৪(ক) ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
দুর্ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার বিকেলেই রেলওয়ে পুলিশ সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান সাদ্দাম অনুপস্থিত ছিলেন এবং গেটে কোনো প্রতিবন্ধক ছিল না। গেটম্যান সাদ্দাম নামাজ পড়তে স্থানীয় মসজিদে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি মসজিদ থেকে ছুটে আসেন।
দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন। তাদের সবাই হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের খন্দকিয়া ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৯ জন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র। খন্দকিয়া যুগীরহাট এলাকার আরএনজে কোচিং সেন্টারের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চার শিক্ষক পিকনিকের উদ্দেশে মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা এলাকায় গিয়েছিলেন।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমীন সবুজের দেওয়া তথ্যমতে, দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জন হলেন— সামিরুল ইসলাম হাসান (১৬), মুসাব আহমেদ হিশাম (১৬), ইকবাল হোসেন মারুফ (১৬), জিয়াউল হক সজীব (২১), ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৪), রিদওয়ানুল চৌধুরী (২২), মোস্তফা মাসুদ রাকিব (২০), আসিফুল ইসলাম আশিক (১৯), শান্ত শীল (১৯), সাজ্জাদ হোসেন (২০) এবং গোলাম মোস্তফা নীরু (২২)।
একই দুর্ঘটনায় আহত ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তারা হলেন— তছমির হাসান পাবেল (১৬), মহিবুল ইসলাম মাহিম (১৮), মো. সৈকত হোসেন (১৬), তানভীর আলম হৃদয় (১৮), আয়াতুল ইসলাম (১৬) এবং মাইক্রোবাসের চালকের সহকারী তৌকিদ ইবনে শাওন (২০)।
নিহতদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামে। বাকিদের মধ্যে নিহত রাকিবের বাড়ি একই উপজেলার শিকারপুর, সাজ্জাদের মাদার্শা, শান্ত শীলের সরকারহাট এবং আশিকের বাড়ি ফতেপুর গ্রামে।
আহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি খন্দকিয়া গ্রামে। শুধুমাত্র মাইক্রোবাসের চালকের সহকারী শাওনের বাসা চট্টগ্রাম নগরীর শেরশাহ এলাকায়।
নিহতদের মধ্যে তিনজন স্কুলছাত্র ও ছয়জন কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। সামিরুল, হিশাম ও মারুফ খন্দকিয়া গ্রামের কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সজীব ওমরগণি এমইএস কলেজের গণিত প্রথম বর্ষের ছাত্র। জিসান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। রিদওয়ানুল চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। রাকিব হাটহাজারী কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে অনার্সে ভর্তির জন্য অপেক্ষমাণ আছেন। আশিক ও শান্ত শীল কে সি শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
নিহত সজীব, রিদওয়ানুল, রাকিব ও জিসান যুগীরহাটের আরএনজে কোচিং সেন্টারের পরিচালক ছিলেন। সামিরুল, হিশাম, মারুফ, আশিক ও শান্ত ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিহত সাজ্জাদ পড়ালেখার সঙ্গে যুক্ত নন। সজীবের বন্ধু হিসেবে তিনিও পিকনিকে গিয়েছিলেন। নিহত গোলাম মোস্তফা নীরুও সজীবের বন্ধু এবং মাইক্রোবাসটির চালক ছিলেন।
আহতদের মধ্যে তছমির, আয়াতুল ও সৈকত কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। মাহিম ও হৃদয় কে সি শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
একইসঙ্গে যাওয়া কে সি শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. ইমন (১৯) অক্ষত আছেন। তাকে চমেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।