পেয়ারা বাগানে অসাধু সিন্ডিকেট, ভোগান্তি পোহাচ্ছে দর্শনার্থীরা
৩১ জুলাই ২০২২ ১৪:০১
বরিশাল: ঝালকাঠির সদর উপজেলার ভীমরুলি ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটগড়-কুরিয়ানা এলাকায় পেয়ারা বাগানসমৃদ্ধ ৪২টি গ্রাম শুধু পেয়ারার চাষ আর ব্যবসার জন্য বিখ্যাত নয়। এখানকার পেয়ারা বাগানকে কেন্দ্র করে এই এলাকা দিন দিন পর্যটকদের আকর্ষণীয় অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। আষাঢ়, শ্রাবণ মাসে পেয়ারা মৌসুম শুরু হতেই বাগানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের আগমনে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলও হচ্ছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি পেয়ারা বাগানসমৃদ্ধ গ্রামগুলোর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চা-নাশতার দোকান বসিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছেন অন্তত তিন শতাধিক পরিবার।
পেয়ারা বাগান আর ভাসমান হাট দেখতে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসে। এখানে এসে তারা ট্রলার অথবা নৌকা ভাড়া করে পেয়ারা বাগানে ঘুরে বেড়ায়। এসময় মাইক, সাউন্ডবক্স বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। তবে তাদের অবস্থানের কোন যথাযথ স্থান না থাকায়, তারা বিভিন্ন এলাকায় ট্রলার কিংবা নৌকাযোগে বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়ায়। ধাপে ধাপে নানা অনিয়ম আর ট্রলার সিন্ডিকেট ফাঁদের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খালগুলোতে একসঙ্গে অনেক নৌকা আর নৌকাভর্তি পেয়ারা। এ দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। বর্ষার পানিতে টইটম্বুর খাল, খালের পাড়ে সবুজ প্রকৃতি আর নৌকায় সবুজ-হলুদ পেয়ারা। ছোট্ট নৌকা কিংবা ট্রলারে দুই পাশে পেয়ারা বাগানের মাঝখান দিয়ে খালে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যটাও বেশ উপভোগ্য।
ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিনদিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এই মোহনায় মূলত বসে ভাসমান হাট। ভাসমান হাটের উত্তর প্রান্তে খালের ওপর ছোট একটি সেতু আছে। সেখান থেকে হাটটি খুব ভালো করে দেখা যায়।
ভাসমান হাট আর পেয়ারা বাগান ঘুরে দেখতে ট্রলার/নৌকা সিন্ডিকেটের কারণে মনগড়া ভাড়া, টিকিট কাটতে হয় পর্যটকদের। ট্রলারে ঘন্টাপ্রতি ৫০০-৭০০ টাকা ও নৌকায় ঘন্টাপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা আদায় করেন চালকরা। এখানে যারা প্রথমবারের মতো আসেন তাদের কাছ থেকে ট্রলারে ঘন্টাপ্রতি ১-২ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবাদের সুযোগ নেই কোথাও। কারণ এ সিন্ডিকেট ফাঁদকে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে প্রভাবশালী ও অসাধু কর্তারা।
আতাউর রহমান ও কাজী তামান্না নামে দুইজন দর্শনার্থী জানান, ঘাটের ট্রলার চালকরা সিন্ডিকেট করার কারণে যে ট্রলারের সাথে কথা বলা হচ্ছে সে একই পরিমাণ ভাড়া চাচ্ছে। যার ফলে একানে আসা লোকজন পড়েছে বিপাকে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে পেয়ারা বাগান না ঘুরে ফিরে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রলার চালক জানান, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন যুবক ট্যুরিস্ট ট্রলার থেকে বেশ কিছু দিন যাবত মোটা অংকের টাকা তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছেন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় তাদের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ কারণে ট্রলার ভাড়া বেড়েছে। এখানে তাদের কিছুই করার নেই।
সারাবাংলা/একে