ব্যবসায়ীকে খুনের পর লাশ গুমের চেষ্টা: দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড
৩১ জুলাই ২০২২ ১৭:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীকে খুনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত আরও দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া লাশ গুমের চেষ্টার দায়ে আসামিদের প্রত্যেককে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৩১ জুলাই) চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শরিফুল আলম ভুঁইয়া এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কামাল হোসেন ও মো. রাসেল। আর কামাল হোসেনের স্ত্রী লিলু আক্তার রিনা ও সুরমা আক্তার নামে আরেক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর নগরীর ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় জালাল উদ্দিন সুলতান নামের এক ব্যবসায়ীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছেলে ইমাজ উদ্দিন ফরহাদ বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। ২১ নভেম্বর কামাল হোসেনকে মামলা তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গ্রেফতারের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়।
মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন সকালে আগ্রাবাদে জামান হোটেলের পঞ্চম তলায় নিজের অফিসে যাওয়ার জন্য পশ্চিম গোসাইলডাঙ্গা এলাকার সুলতান আহমদ মঞ্জিলের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন জালাল উদ্দিন সুলতান। দুপুরে ছেলে ইমাজ উদ্দিন বাবার নম্বরে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। সেদিন বেলা ২টার দিকে জালাম উদ্দিনের নম্বর থেকে একটি এসএমএস আসে ছেলের ফোনে। তাতে লেখা ছিল- ‘আমি একটু কাজে আছি’।
এতে সন্দেহ হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজাখুজি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। পরদিন সকালে নগরীর সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৯ নম্বর রোডে ব্যাংক কলোনির উত্তর গেইট সংলগ্ন নালার ওপর বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জালাল উদ্দিনকে শনাক্ত করেন।
তদন্ত সংস্থা পিবিআই কামালকে গ্রেফতারের পর জানিয়েছিল, কামাল নিহত জালালের মালিকানাধীন আবাসিক ভবনের ভাড়াটিয়া ছিল। ২-৩ মাসের ভাড়া বকেয়া রেখে ঘটনার কয়েক মাস আগে সে পালিয়ে যায়। এ ছাড়া জালালের কাছ থেকে সে ঋণও নিয়েছিল। তার কাছে জালালের প্রায় ২ লাখ টাকা পাওনা ছিল। টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়ায় কামাল ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে— আসামি কামাল ব্যবসায়ী জালালকে প্রলুব্ধ করে নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ির ২ নম্বর রোডে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। ওই বাসায় জালাল উদ্দিন আসামি সুরমা আক্তারের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে এই ঘটনাকে পুঁজি করে কামাল হোসেন টাকা দাবি করে। শুরুতে টাকা দিতে রাজি না হলেও, ছেড়ে দিলে পরে টাকা দেবেন এই শর্তে রাজি হন জালাল উদ্দিন। কিন্তু ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে তাদের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় আসামিরা শ্বাস রোধ ও আঘাত করে জালাল উদ্দিনকে হত্যা করা হয়।
গ্রেফতারের পর আদালতে কামালের দেয়া জাবনবন্দির ভিত্তিতে পিবিআই জানিয়েছিল, জালালকে চেয়ারে বসিয়ে দড়ি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে আসামিরা। এরপর লাশ বস্তায় ভরে গভীর রাতে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় ফেলে দিয়ে চলে যায়। লাশ গুমের জন্য ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ভ্যান উল্টে যাওয়ায় লাশ নালায় ফেলে তারা পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) ও বর্তমানে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পিবিআই মেট্রোর কার্যক্রম শুরুর পর জালাল হত্যা মালাটি ছিল আমাদের কাছে দ্বিতীয় চাঞ্চল্যকর মামলা। প্রথম মামলাটি ছিল কর্ণফুলীতে চার নারীকে ধর্ষণের ঘটনা। জালাল হত্যাকাণ্ড ছিল একেবারে ক্লুলেস। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করি এবং আসামিদের গ্রেফতার করি।’
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৭ সালের ২৮ মে চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। ওই বছরের ৯ অক্টোবর চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলায় ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে রাষ্ট্রপক্ষ।
জালালকে খুনের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় আসামিদের প্রত্যেককে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই আসামি নারী হওয়ায় বিচারক তাদের ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী নোমান চৌধুরী।
দণ্ডিত লিলু আক্তার রিনা পলাতক আছেন। বাকি তিন আসামিকে রায় ঘোষণার পর কারাগারে পাঠানো হয়।
সারাবাংলা/আরডি/একে