Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শুধু রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করলে হবে না, উৎপাদন বাড়াতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩১ জুলাই ২০২২ ২১:৩৭

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি সেখানে শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং বহুমুখীকরণ করতে হবে।

শনিবার (৩১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) প্রথম বৈঠকে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে খাপ খাওয়ার লক্ষ্যে সক্ষমতা লাভের জন্য তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে। যুব সমাজকে নিয়মিত অধ্যয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে পরিবর্তনশীল বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। যাতে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সমাজে তাদের অবস্থান যথাযথ মর্যাদার সাথে বজায় রাখতে পারে।’

কোনো মতে সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়াশোনা না করে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে শুধু কোনো মতে ঘষে-মেজে বিএ, এমএ পাস করেই চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ায়।’ তিনি বলেন, ‘তারা যেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়। আমাদের দলের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান সিআরআই উদ্যোগ নিয়েছে এবং তার মাধ্যমে ইয়াং বাংলা সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যে আভাসটা পাচ্ছি, তাতে আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের জনশক্তিকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’ এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, শুধু বিএ, এমএ পাস করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ও কলেজে যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন ব্যবস্থা চাই যাতে আমাদের দেশের যুব সমাজ সুদক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে উঠে এবং দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়েই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে। যার যে মেধা আছে, দক্ষতা আছে সেটাও যেন বিকশিত হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার কাজ আমি করে খাব। আমি চাকরির পেছনে ছুটব না। নতুন চাকরি দেবো। এভাবেই তাদের কিন্তু আমরা উৎসাহিত করে যাচ্ছি। আমাদের যুব সমাজকে সেটাই অনুধাবন করাতে হবে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে অনুকূল জনমিতিক সুবিধা ভোগ করছে, যা আগামী ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রতি বছর ২২ লাখ কর্মক্ষম যুবগোষ্ঠী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়া যুবশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব না হলে এ জনমিতিক সুবিধাকে জনমিতিক লভ্যাংশে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না। তাই এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপকল্প-২০৪১’ এ পৌঁছানোর পথ সুগম করতে হবে। সেই পথেই বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়।’

বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধের দেশে পরিণত হয়ে গেছে। সেখানে আমাদের বড় বিষয় হলো- আমাদের বিপুল সংখ্যক যুব শ্রেণি আছে। কাজেই আমরা চাই, শ্রমবাজারে যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তার জন্য নিজেদের উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমি মনে করি বিশ্ব একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমাদের অনেক কর্মী বিদেশে কাজও করে। তাদের আমরা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

দক্ষতা সনদ প্রদান এবং দেশে-বিদেশে দক্ষতা মেলা আয়োজন করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে বা সম্ভাবনা রয়েছে- তা নিয়ে দেশে ও বিদেশে দক্ষতা মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। দক্ষতা সনদায়নের ক্ষেত্রে একক সনদায়নের ব্যবস্থা প্রবর্তন ও কার্যকর করতে হবে। যা বিদেশে বাংলাদেশের দক্ষতার ব্র্যান্ডিং হিসেবে কাজ করবে এবং বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে।’

পণ্য বহুমুখীকরণ, রফতানি বৃদ্ধি এবং দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ‘রফতানির বাস্কেটটাও আমাদের বাড়াতে হবে। সেখানে আরও কী কী পণ্য আমরা রফতানি করতে পারি তার জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। সেই পণ্য আমরা কীভাবে উৎপাদন করতে পারি অথবা কীভাবে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারি সেই চিন্তাও থাকতে হবে। শুধুমাত্র বিনিয়োগ আনব তা নয়, আমরা বিনিয়োগ করতেও পারব। সব কিছুর মাঝে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি।’

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। [সূত্র: বাসস]

সারাবাংলা/পিটিএম

উৎপাদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেমিট্যান্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর