পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ: কাজ হবে রাতে, কমবে গাড়ির গতি
৩১ জুলাই ২০২২ ২৩:০০
ঢাকা: পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর জন্য অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে সমীক্ষা শেষ করে তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়া গেলেই আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করা যাবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পদ্মায় রেলসংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, রেললাইন বসানোর সময় সেতুর সড়ক অংশে গাড়ি চলাচলের কারণে সৃষ্টি কম্পনে যাতে কাজ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য রাতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই সময়ে সেতুর ওপর দিয়ে যে গাড়িগুলো চলাচল করবে সেগুলোর গতিও কমাতে হবে।
এর আগে, গত ২৫ জুন জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় পদ্মা সেতু। পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল বিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন আর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে। এই রেলপথ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলায় প্রথম রেলসংযোগ স্থাপন করবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সঙ্গে ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ ও পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত মোট ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চলতি বছরের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর সড়ক পথের সঙ্গে সঙ্গে রেলপথে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অংশ আগে চালু করা হবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ তৈরির নির্দিষ্ট অংশে গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় সড়কের সঙ্গে রেললাইনের কাজ শেষ করা যায়নি। যে কারণে সেতুতে সড়ক ও রেলপথ একসঙ্গে চালু করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১৭ জুলাই রেলওয়েকে সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে সেতু বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেতু বিভাগ আমাদের কাজ শুরুর অনুমতি দিয়েছে। আমরা কাজ শুরুর আগে টোটাল পরিস্থিতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি ছোট সমীক্ষা করেছি। সেটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। চীন থেকে এর জবাব এলেই আমরা লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারব। সেক্ষেত্রে আরও এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেতু বিভাগের সঙ্গে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কাজটি আমাদের রাতে করতে হবে। সেক্ষেত্রে কম্পন এড়াতে গাড়ির গতি কিছুটা কমিয়ে চলাচল করতে হবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লাইন স্থাপনে ছয় মাসের মতো সময় লেগে যাবে। সে হিসাবে আমরা আগামী বছরের জানুয়ারিতে পুরো লাইন বসানোর কাজ শেষ করতে পারব।’
সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে থাকা এই প্রকল্পটি মোট তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা থেকে মাওয়া, দ্বিতীয় অংশ মাওয়া থেকে ভাঙ্গা আর তৃতীয় অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশ শুরু হবে আগে, ঢাকা থেকে মাওয়া পরে এরপরে ভাঙা থেকে যশোর। কাজের অগ্রগতি মাওয়া থেকে ভাঙা ৮০ শতাংশ, ঢাকা থেকে মাওয়ার অগ্রগতি ৬০ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে জানুয়ারিতে কাজ শেষ হবে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত। ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে ঢাকা থেকে মাওয়া অংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুর রাজবাড়ী হয়ে খুলনা, যশোর, দর্শনা, বেনাপোল পর্যন্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। এছাড়া খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন লাইন যেটি আসছে সেটি জানুয়ারির মধ্যে চালু হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর রেল মোংলা পর্যন্ত চালানো সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম