অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে বিদ্যালয়ের গাছ, ভেঙে ফেলা হচ্ছে রাস্তা
১ আগস্ট ২০২২ ০৯:০২
সিরাজগঞ্জ: সদরের বহুলী ইউনিয়নের খাগা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ২০ বছরের পুরানো লক্ষাধিক টাকার কয়েকটি গাছ নিয়ম না মেনেই কাটছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। শুধু তাই নয় গাছ কাটার জন্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আঞ্চলিক সড়কের অংশও।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি একইসঙ্গে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রভাবশালী হওয়ায় এবিষয়ে কথাও বলতে চাইছেন না কেউ। তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে খাগা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, গাছগুলো প্রায় ২০ বছরের পুরোনো হবে এবং বাজারদর হিসেব করলে দেড় লক্ষাধিক টাকা হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পাশের আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে কাটা হচ্ছে পুরাতন মেহগনি গাছগুলো। এর মধ্যে বিশালাকৃতির ৫টি মেহগনি ও ১টি কাঁঠাল গাছ ইতিমধ্যেই কেটে ফেলা হয়েছে। যা মাঠের মধ্যেই পড়ে আছে। এসময় গাছগুলো কাটতে ভেঙে ফেলা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আঞ্চলিক সড়কের কিছু অংশ।
গাছকাটা শ্রমিকরা বলছেন, ‘প্রধান শিক্ষক আপাতত এই লাইনের ৬টি মেহগনি ও একটি কাঁঠাল গাছ কাটতে বলেছেন। আমরা দিন হাজিরা শ্রমিক হিসেবে গাছগুলো কাটছি।’
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টি ১৯৯৩ সালে স্থাপিত হয় এবং তার কয়েক বছর পরেই গাছগুলো লাগানো হয়। সে হিসেবে গাছগুলোর বয়স ২০ বছরের কম হবে না। এছাড়াও গাছগুলোর বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার অনেক বেশি হবে। তবে গাছগুলো কাটার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কেউই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিদুর রহমান বলেন, ‘গাছগুলো কাটার জন্য ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে শুধু একটা রেজুলেশন করা হয়েছে। ওখানে একটা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে তাই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কাটা গাছের কিছু অংশ বিদ্যালয়ের একটি ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হবে এবং বাকিগুলো বিক্রি করা হবে।’
গাছগুলো কে কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত বিদ্যালয়ের কমিটির পক্ষ থেকে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। সেখানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং আমিসহ সবাই আছি।’
বহুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমরা এখানে একটা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করবো। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য গাছগুলো বেঁধে যায়। যেহেতু গাছগুলো বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছিল, তাই আমরাই সেগুলো কেটে নিচ্ছি।’
স্থানীয় বহুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই গাছগুলোর প্রকৃত মালিক হলো ইউনিয়ন পরিষদ। কিন্তু আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। যদি গাছগুলো কাটার প্রয়োজন থেকেই তাকে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী কাটতে হবে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ মোল্লা বলেন, ‘এই কর্মস্থলে আমার নতুন পদায়ন। আমি এই রাস্তাগুলো এখনো চিনি না। তবুও বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে তদন্ত করে দেখবো।’
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এলিজা সুলতানা বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে সেটা একটা কমিটি আছে তাদের মাধ্যমে কাটতে হবে। এই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্য সচিব থাকেন বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তারা আবেদন করবেন এবং সে আবেদন ঢাকা যাবে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পরে সেই গাছের একটা মূল্য নির্ধারণ হবে। সেই নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেই তারা গাছগুলো কাটতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যেহেতু নিয়ম না মেনে কাজগুলো কাটছেন তাই অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মামুনূল রশীদ খান বলেন, ‘তারা এভাবে ইচ্ছে করলেই গাছগুলো কাটতে পারেন না। এর জন্য নির্ধারিত কিছু নিয়ম আছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা বন বিভাগ সেই গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিব এবং পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। এর বাইরে এই গাছগুলো কাটার কোনো সুযোগ নেই।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশুকাতে রাব্বি বলেন, ‘তারা এভাবে গাছগুলো কাটতে পারেন না। তারা এর জন্য কোনো অনুমতিও নেননি। আমি এখনই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলছি।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে ব্যাবস্থা নিতে বলছি।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘তারা কোনো আবেদন করে থাকলে বন বিভাগ সেই গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিবে এবং পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। আর তারা যদি এগুলো না করে থাকেন তাহলে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
সারাবাংলা/এমও