নেমে গেছে পানির স্তর, সেচের অভাবে আমন চাষ ব্যাহত
৩ আগস্ট ২০২২ ০৮:৩৫
যশোর: বর্ষার শেষ প্রান্তে এসেও যশোরে পানির জন্য হাহাকার। শতাধিক হেক্টর জমি আমন চাষের অপেক্ষায়। ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলেও ঠিকমতো পানি উঠছে না। বৃষ্টির জন্যে কোথাও কোথাও হচ্ছে বিশেষ নামাজ আদায়।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) যশোর সদর এলাকায় ভূগর্ভস্ত পানির লেয়ার ছিল ২২ দশমিক ৬ ফুট। এই তথ্য জানিয়ে বিএডিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেচ) মো. আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এই সময় সাধারণত পানির লেয়ার ৩ ফুটের মধ্যেই থাকে। টিউবওয়েলে পানির সংকট হয় না। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে পানির স্তর সাধারণত ২২-২৪ ফুটে নেমে আসে। ২৬ ফুটের নিচে নামলে স্বাভাবিকভাবে টিউবওয়েলে পানি ওঠে না।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মার্চে স্যালো টিউবওয়েল ব্যবহার শুরু করে বোরো চাষিরা, ফলে এপ্রিল থেকে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে যায় এবং অনেক এলাকায় টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। কিন্তু ভরা বর্ষায় এমন হওয়ার কথা না। অথচ বৃষ্টি ঠিকমতো না হওয়ায় পানির স্তর এখনই ২২ দশমিক ৬ ফুটে নেমেছে। কৃষকরা সেচ পাম্প চালিয়ে আমন চাষাবাদ শুরু করেছে। এটা স্বভাবিক অবস্থা নয়।
যশোর উপশহরের বিদ্যুৎ মিস্ত্রি খোকন জানালেন, মোটর দিয়ে টিউবওয়েলে পানি পাচ্ছেন না। কয়েকটা বাড়িতে এমন সমস্যায় তিনি তাদের শর্ট লেয়ারের টিউবওয়েল সংযোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মোটরের সমস্যা নয়, পানি যতটুকু পাচ্ছে তাতে ২-৩ তলায়ও সেই পানি টেনে তুলতে পারছে না মোটর।
একই রকম বিষয় জানালেন বেলতলা জেল রোডের পাইপ মিস্ত্রি শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, অনেক বাড়ির টিউবওয়েল মোটর থেকে পানি পাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে টিউবয়েল থেকে পানি ওঠাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। পানির লেয়ার ফেল করায় এমন হচ্ছে।
উপশহর ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকায় মোটর মিস্ত্রি আব্দুল হামিদ জানান, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মোটরের খবর পেয়েছেন, যা দিয়ে তারা পানি তুলতে পারছে না।
গৃহবধূ আরজু জানান, তাদের মোটর দিয়ে টিউবওয়েল থেকে ট্যাংকিতে পানি তুলতে পারছেন না ৩ দিন ধরে। অবশেষে শর্ট লেয়ারের টিউবওয়েলটা চালু করিয়ে নিয়েছেন মিস্ত্রি দিয়ে। এ পানি ময়লা, ঘোলা ও গন্ধযুক্ত। কাপড় কাচা, খাওয়া কোনোটাই করা যায় না। খাওয়ার পানির জন্যে যে টিউবয়েলটা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে একজগ পানি তুলতে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে।
এদিকে যশোরের মণিরামপুর, চৌগাছা, বাঘারপাড়া, কেশবপুর, অভয়নগর উপজেলার অনেক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো পানি অভাবে আমনের জমি পাকাতে পারেননি। বীজতলা শুকিয়ে ধানের চারা লাল হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন। কোনো কোনো এলাকার মানুষ বৃষ্টির জন্যে বিশেষ নামাজ আদায় করছেন বলেও কৃষকরা জানান।
অনেক চাষি জানান, পানি অভাবে তারা পাট জাগ দিতে পারছেন না। বর্ষার এই সময়ে খালে, বিলে, ডোবা, নালা বা পুকুরে পর্যাপ্ত পানি থাকে, পাট জাগ দিতে (পাট পঁচাতে) সমস্যা হয় না। আমন রোপণেও সমস্যা হয় না। এ বছরের মতো এমন শুকনো মৌসুম বর্ষাকালে তাদের জীবনে দেখেননি বলেও জানান কৃষক ও চাষিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাটের সমস্যা তো হয়েছেই, ধান উৎপাদন না হওয়ায় চাষিরা না খেয়েই মারা যাবে, এমন আশঙ্কা তাদের। তাদের মতে, এতে ঘরে ঘরে অভাব বাড়বে। পাট, ধান পরপর দুটো ফসল এভাবে বৃষ্টি অভাবে মারা গেলে, স্বাভাবিক জীবন যাত্রার উপায় থাকবে না।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো.মঞ্জুরুল হক জানান, যশোরে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর। সাধারণত যশোরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়। আমনের ঋতু হিসেবে অন্য বছর ৮০ শতাংশের বেশি জমি রোপণ সম্পন্ন হয়। অথচ এবার এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ হয়েছে।
তিনি জানান, গত কয়েক বছর একটু দেরিতে ভারী বর্ষা হচ্ছে। তবে এতদিনে পানি থাকে জমিতে। এবার ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ধান রোপণের সময় মেনে নিচ্ছে কৃষি বিভাগ। তারপরও জেলার লক্ষ্যমাত্রার এক সপ্তমাংশ জমিতে আমন রোপণ হয়নি। অবশ্য তিনি আশাবাদী, আগামী কিছু দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি হলে আমনে আর ব্যঘাত ঘটবে না। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক সেচ পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্ত পানি উঠিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছেন।
কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, নিকট অতীতে বড় বৃষ্টি হয়েছে ৩০ জুলাই রাতে। সে সময় যশোরে ১৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে এ বছর এতো ভারী বৃষ্টি হয়নি। খুব শিগগিরই এমন ভারী বৃষ্টি হবে এবং কৃষকরাও আমন আবাদ করতে পারবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সারাবাংলা/এএম