ভোলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত নেতার জন্য দোয়া
২ আগস্ট ২০২২ ২৩:৪০
ভোলা: পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিমের আত্মার মাগফেরাত ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি মো. নুরে আলমের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সোমবার নিহত আবদুর রহিমের জানাজায় জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকলেও দোয়া মাহফিলে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর ও যুগ্ম সম্পাদক মো. কবির হোসেন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। এদিকে মামলা হওয়ার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বিএনপির এক নেতা জানান, পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে মামলায় নাম থাকা নেতারা ইচ্ছা থাকা সত্বেও এ দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থাকতে পারেনি।
দোয়া মাহফিলে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ভোলার রাজনীতির ইতিহাসে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোনোদিন ঘটেনি। বিগত দিনে ভোলা জেলা বিএনপি বহু রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে কিন্তু কোনো দিন এরকম ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের সঙ্গে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। কিন্তু বিএনপি কখনো সীমা লঙ্ঘন করেনি। আমরা সব সময় দায়িত্বশীল আচরণ করে থাকি। কিন্তু কি এরকম ঘটনা হয়েছে যার জন্য এরকম নির্মমভাবে গুলি চালাতে হবে।
আবদুর রহিম হত্যায় বিএনপির পক্ষ থেকে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। জানি বিচার হবে না, তবুও আমরা তাদের বাধ্য করব। এ সরকারই এ হত্যার বিচার করতে হবে।’
আহত জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন উল্লেখ করে গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ‘নুরে আলম লাইফ সপোর্টে আছে। তার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত তার মাথায় অস্ত্রপাচার করা সম্ভব না বলে জানিয়ে দিয়েছে চিকিৎসক। সে বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতারে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। তার অবস্থাও ভালো না। এখন আমাদের দোয়া করা ছাড়াও কোনো আর উপায় নেই। তাই আমরা এ দোয়ার আয়োজন করেছি। আগামীকাল-পরশু ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা ভোলায় আসবেন।’
অনুষ্ঠান দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন ভোলা আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক মুফতি আহম্মেদ উল্লাহ ফকি।
এদিকে ঢাকার কমপোর্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমের বড় ভাই মো. আবুল কাশেম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, নুরে আলমের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকদের ধারণা করেছেন গত দুই দিনে তার অবস্থা উন্নতির দিকে যাবে। কিন্তু তা না হয়ে বরং অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাই এখন তার বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহই একমাত্র ভরসা।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ভোলা সদর থানার উপপরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন বাদী দুইটি মামলা করেছেন। একটি পুলিশের ওপর হামলা, অপরটি হত্যা মামলা। পুলিশের ওপর হামলা মামলায় ৭১জনের নাম উল্লেখ করে ২৫০-৩০০জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৯জন। ৯ জনের মধ্যে ঘটনার দিন ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া ৫ জনকেও এ মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। এরা হলেন সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের মো. রিপন, রাজাপুর ইউনিয়নের মো. রিয়াজুল ইসলাম, ধনিয়া ইউনিয়নের মো. মাকসুদ ওরফে মাসুদ, চরনোয়াবাদ এলাকার মো. আজমির, রাজাপুর ইউনিয়নের মো. নকিব। এদের সঙ্গে সংঘর্ষের দিন রাতে দৌলতখান উপজেলা থেকে আটক হওয়া দৌলতখান পৌর বিএনপির আহবায়ক আলমগীর ও বোরাহানউদ্দিন উপজেলা থেকে আটক হওয়া বোরহানউদ্দিন পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান কবির, যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান লিটন, মো. মোরশেদকেও আসামী হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের দায়ের করা এ মামলায় জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আসামী করা হলেও জেলা বিএনপির সভাপতি আলাহাজ¦ গোলাম নবী আলমগীরকে আসামি করা হয়নি।
ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, দুইটি মামলার মধ্যে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় এ পর্যন্ত ১০জনেক গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
সারাবাংলা/এনএস