সেপ্টেম্বরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করতে চায় সরকার
৩ আগস্ট ২০২২ ১১:৫৫
ঢাকা: আগামী সেপ্টেম্বরে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করতে চায় সরকার। সেলক্ষ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পাওয়া গেলে সেপ্টেম্বরের যেকোনো সময়ে উদ্বোধন করা হবে বহুল আলোচিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এদিকে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসঙ্গে উদ্বোধন করবেন সম্প্রতি এমন এক খবর দিয়েছিল ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। তবে তারা চান এই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই উদ্বোধন হোক। বিদ্যুৎ সংকটের এ সময়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে এলে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ খাতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোর একটি রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি- কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপরে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দুই দেশ সমঝোতা স্মারকে সই করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে দুই দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি বিপিডিবি ও এনটিপিসি যৌথ একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। ইকুইটি বিনিয়োগ সমান ভাগে ধরে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট রামপাল বাস্তবায়নে গঠন করা হয় বাংলাদেশ- ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড- বিআইএফপিসিএল। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৭ সালে। বাস্তবায়নকারী কোম্পানি বিআইএফপিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, কাজ শুরুর তারিখ থেকে ৪১ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলে করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। এক বছর পিছিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উৎপাদন শুরুর চিন্তা করা হয়। কিন্তু সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ার পাশাপাশি কয়লার সংস্থান না হওয়ায় তা আবার পেছানো হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। প্রকল্পে কয়লা হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া প্রস্তুত হলে কয়লা সরবরাহ শুরু করা হবে। তবে জানা গেছে, দীর্ঘমেয়াদে যে চুক্তির কথা ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন করে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আনতে চায় সরকার। সাশ্রয়ী বিবেচনায় এই তিন দেশের যেকোনো একটি দেশ থেকে কয়লা নেবে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের প্রভাবে বাংলাদেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও উৎপাদন কমিয়ে লোডশেডিং এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসা জরুরি বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ রেশনিং এর শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল রামপাল, মাতারবাড়ি কিংবা পায়রা কেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করলে চলমান সংকট কেটে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসা জরুরি। এই মুহূর্তে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করলে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎখাতে প্রভাব পড়বে। কিছুটা হলেও বিদ্যুৎ সংকটের যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে স্বস্তি দেবে।
সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়, যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে উদ্বোধন করবেন। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অন্যতম বাংলাদেশ। নানাভাবে দুই দেশের সম্পর্ক এখন আর গভীর। আগামী ৫ থেকে ৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা রয়েছে। সেখানে প্রকল্পটি উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও।
এ প্রসঙ্গে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ম্যানেজার (জনসংযোগ) আনোয়ারুল আজিম সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তার সময় পাওয়া গেলে উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হবে।
সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীর ঘেঁসে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদী ও অধিকার কর্মীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ক্ষতি রোধের বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/জেআর/এএম