কয়লা সংকটে বন্ধের উপক্রম বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র
৪ আগস্ট ২০২২ ১১:৫৬
ঢাকা: বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির নতুন কূপ থেকে কয়লা উত্তোলন পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তা পুরোপুরিভাবে শুরু করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কাজ করা প্রায় একশ শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে কয়লার মজুত তলানিতে নেমে আসায় সেখানকার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন প্রায় বন্ধের উপক্রম। খনির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন কূপ থেকে কয়লা পেতে আরও অন্তত ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
সূত্র অনুযায়ী, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ১ হাজার ৩১০ নম্বর কূপে মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন কূপ থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যে প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ১মে থেকে। সেই থেকে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন কূপ থেকে কয়লা উত্তোলন করতে হলে সকল ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হয়। যা করতে দুই থেকে তিন মাসের মতো সময় লাগে। এবার নতুন কিছু যন্ত্রপাতি আসার কারণে নতুন কূপে কাজ শুরু করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগার কথা ছিল। যে কারণে আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে কয়লা উত্তোলন শুরুর কথা জানিয়েছিল চীনা কোম্পানি সিএমসি-এক্সএমসি। এদিকে দ্রুত কয়লার মজুত ফুরিয়ে আসায় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে দেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। যে কারণে প্রায় কুড়ি দিন আগে থেকেই ট্রায়াল শুরু করেছিল খনি কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাতেই নতুন খনি ১ হাজার ৩০৬ নম্বর থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছিল বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)। বিসিএমসিএল সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে খনিতে কাজ করা অনেক শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যে কারণে গত তিন দিন ধরে খনিতে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন শ্রমিকেরা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নতুন কূপ থেকে কয়লা উত্তোলোন কোনোভাবে সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী গণমাধ্যমকে জানান, দেশজুড়ে বিদ্যুৎ সংকট বিবেচনায় গত ২৭ জুলাই থেকে নতুন কূপ থেকে পরীক্ষামূলক কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ৩০ জুলাই থেকেই শ্রমিকেরা করোনা আক্রান্ত হতে শুরু করে। এরপর একে একে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন চীনা শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়ে, রয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকও। এই পরিস্থিতিতে কাজটা একটু পিছিয়ে গেলো।
এদিকে এই কয়লা খনিকে কেন্দ্র করেই গড়ে তোলা দিনাজপুরের একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কয়লার মজুত ফুরিয়ে আসছে। জানা গেছে, কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটের একটি চালু রয়েছে এবং দৈনিক উৎপাদন ২০০ মেগাওয়াটের নিচে নেমে এসেছে। একদিকে জ্বালানি সংকটে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আবার গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়ে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিততে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখা ব্যপকভাবে প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তাছাড়া উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে এই কেন্দ্রের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।
জানা যায়, বড় পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুকেন্দ্র থেকে দৈনিক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে দুই হাজার টন কয়লার দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লার মজুত আছে তা দিয়ে এক সপ্তাহের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এর মধ্যে কয়লা না পাওয়া গেলে কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তোলিত কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৬ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। ১২৫ মেগাওয়াট করে দুইটি ইউনিটে মোট ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উত্তরাঞ্চলের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র। পরবর্তীতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালে আরও ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় এবং ২০১৭ সালে উৎপাদনে আসে। কিন্তু কয়লা স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কখনোই পুরোপুরি চালু রাখা সম্ভব হয়নি।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ